উড়ন্ত ঘোড়ার আবিষ্কারক, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ডাক্তার আবুল সেই রাতে বোররাক নিয়ে গবেষণায় মগ্ন ছিলেন। উড়ন্ত ঘোড়ার অস্তিত্ব থাকলে বোরাক থাকা অসম্ভব নয়। তবে মানুষের মাথাওয়ালা ঘোড়া বাস্তবে নেই এটুকু তিনি নিশ্চিত ছিলেন। তাই বোররাক নিয়ে স্বপ্ন দেখার চেষ্টা চালিয়েছেন অনেকদিন থেকেই। এজন্য কোরানের উপর মাথা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু কোনোমতেই স্বপ্নে বোররাকের দেখা পাওয়া যায়নি।
সেই রাতেও তিনি একইভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলেন। শুয়ে শুয়ে গান শুনছিলেন - "হাল ছেড়োনা বন্ধু ..."। শুনতে শুনতে ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। মধ্যরাতে তিনি দেখা পেলেন, বোররাকের নয়, কিন্তু তার চেয়েও আজব এক জন্তুর। সে প্রাণীর দেহ ছাগলের এবং গর্দানে মানুষের মাথা। কাচি কচি দাড়ি নেড়ে সে আবুলকে ডাকাডাকি করছিল।
আবুল উঠে প্রশ্ন করলেন- "আপনার পরিচয়?"
অদ্ভূত প্রাণী উত্তর দিল- "মহম্মদ খিজির খান।"
আবুল অবিলম্বে মোবাইলে গুগল খুলে সার্চ করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু এই অদ্ভূত মহম্মদ খিজির খান সম্পর্কে কিছুই তথ্য পাওয়া গেল না। আবুল তখন প্রশ্ন করলেন, আপনার মত কি আরও আছে? নাকি আপনি একাই এই প্রজাতির?
মহম্মদ খিজির খান চিৎকার করে উঠলেন- "একা নই, আমি একা নই। আমরাই সব। সবাই আমার মতো।"
আবুল অবাক হলেন, কই; আপনার মত আগে কোথাও দেখিনি তো?
দেখবেন কিভাবে? দেখলেও চিনবেন না। তারা তো ঢাকা থাকে। আমি আপনাকে দেখা দিলাম কারণ আপনার পরামর্শ প্রয়োজন।
আবুল খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। প্রথমে ভেবেছিলেন এক নতুন প্রাণী আবিষ্কার করে ফেলেছেন। নোবেল এবার মাথায় পড়বেই। কিন্তু এরকম অনেক আছে শুনে তাঁর মন একেবারে ভেঙে গেল। শোকাকুল কন্ঠে বললেন, - "আচ্ছা, বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি!"
অদ্ভূত প্রাণী বললেন, "সমস্যা আমার নাম নিয়ে।"
আপনার নাম? মানে মহম্মদ খিজির খান? তাই তো? এই নামে সমস্যা কিসের?
মারাত্মক সমস্যা। এই নামের জন্যই আমাকে কেউ পছন্দ করে না। পার্টিতেও আমাকে সবাই ব্রাত্য বোস করে রেখেছে। যদিও আমার মধ্যে নেতা হবার সমস্ত গুণ ছিল তবুও তারা আমাকে ইলেকশনে দাঁড়াতেই দিল না। যতবারই দাঁড়াতে চাই, হাইকমান্ড বলেন- তুই ব্রাত্য, তুই বোস।
আবুল বড়ই চিন্তায় পড়ে গেলেন। "আপনার নামের অর্থটা নিয়েই সমস্যা। কিন্তু আপনি কি মনে করেন যে ভোটারেরা এত বেশি বোঝে?"
"ভোটারেরা নিজেরা বুঝবে কেন? বিরোধী দল তাদের বোঝাচ্ছে। আমার নামটা নাকি ধর্মবিরোধী। তাই আমি ভাবছিলাম নামটা পাল্টাব । এই ব্যাপারেই আপনার পরামর্শ দরকার।"
"তা বেশ তো। মহম্মদ খিজির খেলে যদি আপত্তি থাকে তাহলে মহম্মদ জামাল খান হয়ে যান। "
"এটা সম্ভব হবেনা। জামাল খান আমার বাপের নাম। বাপ বেটা দুজনের কি একই নাম চলে?"
"ধর্মের শুরুতে তো চলত শুনেছি। আবু বকর এর ব্যাটার নাম হত বকর-বিন-আবুবকর। কিন্তু সেসব দিন আর নেই। যাইহোক, আপনি কোথায় ইলেকশন লড়বেন? আপনাদের দেশে ভোটারেরা কেমন?"
ভোটার তো প্রায় সকলেই মহম্মদী। কিছু পুতুলভক্তও অবশ্য আছে। তাদের ভোটগুলোও পেলে মন্দ হয়না।
তাহলে একটা কাজ করতে পারেন। 'মহম্মদ খিজির খান্না' হয়ে যান। এতে আপনার ধর্মও বাঁচবে, আবার অন্য ধর্মেরও বাতাস লেগে কিছু ভোট পেতে পারেন।
খান-না হতে বলেন?
অবশ্যই। দেখবেন, এতে আপনার দুই নৌকাই থাকবে।
নৌকার কথা বুঝলেন কিভাবে? সত্যিই আপনি জিনিয়াস! আপনার কাছে এসে ভুল করিনি তাহলে। আচ্ছা, আসি তবে।
চোখের পলক ফেলার আগেই অদ্ভূত প্রাণী ভ্যানিশ হয়ে গেলেন। আবুল বুঝতেই পারলেন না যে স্বপ্ন দেখলেন নাকি জেগে ছিলেন। বাকি রাত তাঁর আর ঘুম হলনা।
পরের দিন সকালেই তিনি লোকগাথা বিশারদ বন্ধু ফকির আলিকে ফোন করলেন। সমস্ত ঘটনা শুনিয়ে দিয়ে জানতে চাইলেন এই ধরণের প্রাণীর কথা কোনো সাহিত্যে আছে কিনা।
ফকির আলি খুব সিরিয়াস ভাবে বললেন- "ভাই আবুল, তুমি কি তবে ব্লগ পড়ো না?"
নাহ! ব্লগে পড়ার আছে কি?
অনেক কিছুই আছে। তুমি যে প্রাণীর কথা বললে তাদের সম্পর্কে ব্লগে বিস্তারিত পাওয়া যায়। এদের বাংলা নাম ছাগু। তোমার চারিদিকেই এরা প্রচুর আছে।
ছাগু? আচ্ছা, সেও বলছিল বটে অনেক আছে। কিন্তু আমি দেখি না কেন?
দেখেছ নিশ্চয়। আলখাল্লা আর টুপি থাকায় চিনতে পারোনি। মানুষ মনে করেছ। বিস্তারিত জানতে চাইলে গুগল সার্চ করে নিও।
আবুল ফোন কেটে দিয়ে গুগলে "ছাগু" লিখে সার্চ শুরু করলেন। তার পর থেকে তিনি অন্য সব কাজ ফেলে ঐ গবেষণাতেই ব্যস্ত আছেন। তাঁর একান্ত গবেষণায় বাংলা গালির অভিধানে অনেক নূতন শব্দ যুক্ত হয়েছে এবং হয়েই চলেছে। আমরা তাঁর গবেষণার আরও প্রগতি কামনা করে শেষ করলাম।