উড়ন্ত ঘোড়া ও দুরন্ত গবেষণা।
ইহা একটি গবেষণার প্রতিবেদন। পাঠক এটি বুঝিয়া পড়িবেন।
প্রথম পর্যায়ঃ-
জীববিজ্ঞানী ডঃ আবুল দিওয়ানা জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবকে এক পত্র লিখিলেন।
মাননীয় মহাশয়
,লোকগাথাবিশারদ ডঃ ফকির আলি যখন তাঁহার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করিলেন তখন তাহা পড়িয়া দেখিলাম যে দুনিয়ার সকল দেশের লোককথায় উড়ন্ত ঘোড়া পাওয়া যায়। তাঁহার গবেষণাপত্রটি সঙ্গে দেওয়া হইল।আমি ডঃ আবুল দিওয়ানা এই ফলাফল লইয়া সমাজবিজ্ঞানী ডঃ আদম ওস্তাদ এর সঙ্গে কথা বলিয়াছি। তিনি মত প্রকাশ করেন যে দুনিয়ার সকল দেশেই যে কথা লোকে বিশ্বাস করিত তাহা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। অর্থাৎ উড়ন্ত ঘোড়া থাকা খুবই সম্ভব। আর তাহা যদি থাকে তবে তাহাকে আবিষ্কার করা আমাদের কর্তব্য।
মহাশয়, আমরা তিন জনে পরিকল্পনা করিয়াছি যে এই উড়ন্ত ঘোড়ার অনুসন্ধানে আমরা শীঘ্র একটি বিশ্বব্যাপী অভিযান শুরু করিব। এই অনুসন্ধানের খরচের জন্য আমরা আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।
========================
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ-
মহাসচিব এই জরুরী পত্রটি পাঠ করিয়া একটি সভা ডাকিলেন। সেই সভায় সকলেই একবাক্যে জানাইলেন যে উড়ন্ত ঘোড়ার কথা তাঁহারা সকলেই পড়িয়াছেন ও শুনিয়াছেন। তবে এমন ঘোড়া থাকা সম্ভব বলিয়া তাঁহারা মনে করেন না। যদিও এই সম্পর্কে কোনো গবেষণা কেহ কখনো করে নাই।
মহাসচিব সিদ্ধান্ত করিলেন যে বিনা অনুসন্ধানে উড়ন্ত ঘোড়া নাই বলিয়া সিদ্ধান্ত করা উচিত হইবে না। তাই তিনি ডঃ আবুল এর কাছে খরচের সম্ভাব্য পরিমাণ জানিতে চাহিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর প্রাথমিকভাবে একটি অনুসন্ধানী দল গঠিত হইল, যাহার নেতা হইলেন ডঃ আবুল। স্থির হইল যে এই দল ছয়মাসের মধ্যে তাহাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করিয়া একটি প্রতিবেদন পেশ করিবে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইবে। মহাসচিব এই ছয় মাসের খরচ বাবদ এক হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করিলেন।
========================
তৃতীয় পর্যায়ঃ-
ছয় মাস পর বিজ্ঞানীদল তাঁহাদের রিপোর্ট দিলেন। তাহাতে লেখা ছিল, আমরাপৃথিবীর সমস্ত দেশের সমস্ত গৃহপালিত ঘোড়াদের পরীক্ষা করিয়াছি। তাহাদের মালিকদের প্রশ্ন করিয়াছি। তাহাতে দেখা যায় বেশ কিছু ঘোড়ার নাম পক্ষীরাজ রাখা হইয়াছে। তাহাদের কেহ কখনো উড়িতে দেখে নাই বলিয়াই জানাইয়াছে। কিন্তু তাহারা এমন বলে যে এযাবতকাল কোনো ঘোড়াকেই সর্বক্ষণ নজরে রাখা যায়নাই। তাই মানুষ না দেখিলে যে তাহারা ওড়ে না এমন নিশ্চিত হওয়া যায় না। আপাততঃ আমাদের মনে হয় যে উড়ন্ত ঘোড়া থাকা সম্ভব নহে এমন সিদ্ধান্ত করার মত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নাই। তাই এই অনুসন্ধানে বন্য ঘোড়াদেরও সামিল করার উদ্দেশ্যে আমরা আরো এক বৎসর সময় ও দুই হাজার কোটি ডলার মাত্র বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন করিতেছি।
আবার সভা বসিল। ওস্তাদেরা বলিলেন যে উড়ন্ত ঘোড়া বলিয়া কিছু নাই সিদ্ধান্ত করার জন্য পৃথিবীর সকল ঘোড়াকে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। নতুবা নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব না। ফলে এই আবেদনও মঞ্জুর হইল।
========================
চতুর্থ পর্যায়ঃ-
সময় শেষে বিজ্ঞানীদল জানাইলেন যে পৃথিবীর সকল ঘোড়াদের প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে যে তাহারা কেহই কখনো মানুষের সামনে ওড়ে নাই। তবে তাহার অর্থ এই হয় না যে তাহারা উড়িতে পারে না। এমনও হওয়া সম্ভব যে ইহাদের মধ্যেই এক বা একাধিক উড়ন্ত ঘোড়া আছে কিন্তু তাহারা ইচ্ছা করিয়াই মানুষের সামনে ওড়ে না। পরবর্তী পরীক্ষা হিসাবে এইসব ঘোড়াদের এরোপ্লেনে তুলিয়া আকাশ হইতে ফেলিয়া দেখা দরকার যে তাহারা বাধ্য হইয়া ওড়ে কিনা। আবার যাহারা উড়িতে পারেই না তাহারা যাতে পড়িয়া না মরে তাহার ব্যবস্থাও রাখা আবশ্যক। এই কাজের জন্য আমরা পঞ্চাশ লক্ষ কোটি ডলারর সাহায্য প্রার্থনা করি। সেই সঙ্গে প্রতিটি পালিত ঘোড়ার মালিকের অনুমতি আদায় করিয়া দিতেও আবেদন করি। এছাড়া বন্য ঘোড়াদের পরীক্ষায় সামিল করিতে যে সকল আইন বাধা হইয়া দাঁড়ায় সেগুলির পরিবর্তন করাও প্রয়োজন।
========================
বর্তমান অবস্থাঃ-
জাতিসঙ্ঘ আপাততঃ এই আবেদন মঞ্জুর করা সম্ভব কিনা সেই বিষয়ে বিবেচনা করিতেছে। এখনো পর্যন্ত হওয়া গবেষণায় উড়ন্ত ঘোড়া থাকা সম্ভব কিনা তাহার কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্ত করা যায় নাই।