ডঃ আবুল দিওয়ানাকে মহারাণী তলব করিয়াছেন। তাঁহার নাকি মারাত্মক সমস্যা। সূর্যোদয়কালেই একেবারে তাঁহার নিজের সুপারফাস্ট গরুর গাড়িখানি লইয়া নিজের খাস বান্দাদিগকে পাঠাইয়াছেন। সঙ্গে তাঁহার স্বহস্তলিখিত সিলমোহর করা পত্র। সর্বোচ্চ গোপনীয় এক সমস্যা সমাধানে তিনি অবিলম্বে ডঃ আবুলের সহায়তা প্রার্থনা করেন।
ডঃ আবুল দেশভক্ত বিজ্ঞানী। তাছাড়া দেরী করিলে মাথাপাগল মহারাণী হয়ত রাষ্ট্রদ্রোহী ভাবিয়া বসিবেন। অতএব তাঁহার আপত্তি করার কোনো পথ ছিল না। গামছা পরা অবস্থাতেই তিনি সুপারফাস্ট গরুগাড়িতে উঠিয়া বসিতে বাধ্য হইলেন। মহারাণীর খাস বান্দারা নিজেদের দেশপ্রেম প্রমাণ করিবার জন্য যথাসাধ্য দ্রুত গাড়ি চালাইয়া দিল। দেশের পথঘাট বড়ই মনোহর, লাঙল দেওয়া ধানক্ষেত অপেক্ষা পথের অবস্থা অনেক গুণে ভাল। তাই সারা পথটুকু তাঁহাকে গামছা সামলাইতে ব্যস্ত থাকিতে হইল। অন্য কিছু ধরার উপায় না থাকায় বার দুই ডিগবাজিও খাইলেন। মহারাণীর প্রতি তাঁহার ভক্তি আরো বাড়িয়া গেল।
রাজমহলে প্রবেশ করার পর অবশ্য তিনি বিশেষ আদর যত্ন পাইলেন। অন্য পোষাক আনিবার মত সময়ের অভাব থাকায় মহারাণী ডঃ আবুলের জন্য রাজপুত্রের আলমারী হইতে ভোটযুদ্ধের সাজসজ্জা আনিয়া দিলেন। যদিও তাহা মাপে মেলেনাই, তবু ভালই মানাইয়াছিল। উহা পরিধান করিয়া ড; আবুল আরো বেশি দেশপ্রেম অনুভব করিলেন। সাজসজ্জায় ন্যাপথালিনের সুগন্ধ পাইয়া তাঁহার মন আরো প্রফুল্ল হইয়া উঠিল।
অতঃপর মহারাণী তাঁহার সমস্যা বর্ণনা করিলেন। সে সমস্যা নিম্নরূপ: মহারাণী একদা একটি খাটাল খুলিয়াছিলেন। সেখানে অতি উন্নত প্রজাতির গরু-ছাগল রাখা হইয়াছিল। উদ্দেশ্য ছিল রাজমহলের জন্য খাঁটি দুধের জোগান অব্যাহত রাখা। একদা একদিন তিনি দুগ্ধপান করিয়া সন্দেহ করিলেন তাহাতে জল মিশ্রিত করা হইয়াছে। তাই তিনি খাটালের প্রধান গোয়ালার উপর নজর রাখার জন্য এক পরিদর্শক নিযুক্ত করিলেন যাহাতে গোয়ালারা দুধে জল দিতে না পারে। তাহাতে কিছুদিন সব ঠিকই ছিল কিন্তু পরে দেখা গেল জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহা দেখিয়া মহারাণী প্রথম পরিদর্শকের উপর আরেকজন পরিদর্শক নিয়োগ দিলেন। কিন্তু তাহার ফলে জলের ভাগ আরো বৃদ্ধি পাইয়া গেল। আরেকজন মহাপরিদর্শক নিযুক্ত করিলে এই সমস্যার সমাধান হইবে কিনা তাহাই এখন ডঃ আবুলের গবেষণার বিষয়।
সমস্যা শুনিবার পর ডঃ আবুল প্রথমেই গোয়ালার সহিত বাতচিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। ইচ্ছা প্রকাশিত হইবামাত্র মহারাণীর সুপারফাস্ট গরুর গাড়ি তাঁহাকে ছয় ঘন্টার মধ্যে খাটালে হাজির করিল। সেখানের সমস্ত ব্যবস্থা প্রথমে পরিদর্শন ও পরে এক্স রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং ম্যাগনেটিক রেজ়োন্যান্স ইমেজ স্ক্যানিং করিয়া আবুল নিশ্চিত হইলেন যে সেখানে কেহই দুধে জল মিশাইতেছে না। অতঃপর আবুল ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন পরিদর্শকের সহিত বাতচিত করিবেন। কিন্তু এজন্য তিনি সুফারফাস্ট গরুর গাড়ি ব্যবহার করিলেন না। আপনার গামছাখানি পরিয়া গোয়ালা সাজিয়া দুধের টাঙ্কি লইয়া পরিদর্শকের নিকট জমা দিলেন। পরিদর্শক মহাশয় সেই টাঙ্কি হইতে কিছু দুগ্ধ বাহির করিয়া লইলেন এবং সমপরিমাণ জলমিশ্রিত করিয়া উপরওয়ালার নিকট পাঠাইয়া দিলেন। উপরওয়ালা পরিদর্শকও টাঙ্কি হইতে কিছু পরিমাণ দুগ্ধ লইলেন এবং সমপরিমাণ জল মিশাইয়া রাজমহলে পাঠাইয়া দিলেন। পরদিন মাহারাণীর খাসমহলে পরিদর্শক মহাশয়ের তলব হইল। পরিদর্শকরা সেখানে পরিষ্কার জানাইলেন যে গোয়ালারা জল মিশাইয়াছে কিনা তাহা টেস্ট করার জন্য তিনি টাঙ্কি হইতে স্যাম্পল লইয়া থাকেন মাত্র। সেই স্যাম্পল তিনি প্রত্যহ টেস্ট করিয়া থাকেন এবং গোয়ালারা জল দেয় না ইহা নিশ্চিতভাবেই জানেন। যে দুগ্ধ তাঁহারা নমুনা হিসাবে সংগ্রহ করেন তাহা পাণ করিয়াই পরীক্ষা করেন। তবে গোয়ালা ছাড়া অন্য কেহ জল দিলে তাহা দেখার কোনো শর্ত তাঁহাদের চাকুরীর মধ্যে ছিল না।