তখন স্বর্গ খুলিয়া গেল
The spaceship of Ezekiel
by J. F. Blumrich
Bengali Translation by Ajit Dutta
বাংলা অনুবাদ - অজিত দত্ত
প্রকাশক - লোকায়ত প্রকাশন
(http://i42.tinypic.com/20atkz4.jpg)
(http://logicalforum.com/%5BIMG%5Dhttp://i42.tinypic.com/20atkz4.jpg)
লেখক পরিচিতিঃ
য়োসেফ এফ ব্লুমরিশের জন্ম ১৯১৩ সালে অস্ট্রিয়ার স্ট্যের শহরে। যুক্তরাষ্ট্রে গমন ১৯৫৯ সালে। সেখানে কাজ শুরু করেছিলেন রকেট-নির্মাণ প্রকল্পে। নাসায় (NASA) প্রবিষ্ট হওয়ার পর প্রথম পরিচালনভার গ্রহণ করেন নির্মাণ-গবেষণা প্রকল্পের, তারপর অলঙকৃত করেন সে-সংস্থার সিস্টেমস লে-আউট বিভাগের প্রধানের পদ এবং প্রকান্ড প্রকান্ড রকেট নির্মাণের কাজে ব্রতী হন তাছাড়া সেটার্ন রকেটেরও তিনি সহ-নির্মাতা।
হাইড্রলিক ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত অনেকগুলি পেটেন্টের অধিকারী তিনি। ইউরোপে থাকা কালে বহুদিন সে বিষয়ে কাজ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তাঁর বিরাট কাজের পুরষ্কারস্বরূপ নাসার (NASA) 'এক্সেপশনাল সার্ভিস' পদক লাভ করেছিলেন। অনেকগুলি প্রাযুক্তিক প্রবন্ধেরও প্রণেতা তিনি।
অনুবাদকের নিবেদন
আমার মতন লোকের পক্ষে 'ব্লুমরিশ' অনুবাদ করা দুঃসাধ্য', অতীব দুঃসাধ্য' সাধ্যাতীত' ইত্যাদি বলেও ঠিক বোঝাতে পারবো না -, কতখানি- দুঃসাধ্য। কোন বিশেষণই বোধহয় উপযুক্ত হবে না। তবু অনুবাদ করেছি, বলতে পারেন, না করে পারিনি বলেই করেছি।
আসলে এ কাজের গোড়ায় দুটো চিন্তা প্রেরণা জুগিয়েছে। এক-নম্বর, দানিকেনের অগণিত বাঙালি পাঠকের কাছে কল্পনা-বিলাসী', 'খেয়ালী' ইতাদি আখ্যায় ভূষিত দানিকেনের কল্পনা- এবং খেয়াল যে কত নিখুঁত, কত বিজ্ঞানসম্মত, তার প্রমাণ পোছে দেওয়া আর দু-নম্বর চিন্তার মূলে আছে একটা প্রকাণ্ড বড় আশা।
আমাদের বেদ-উপনিষদ-পুরাণ-মহাকাব্যে বোধহয়,- বোধহয় কেন-, -নিশ্চয়ই ইজেকিয়েলের, মতন অমন অনেক অনেক তথ্য লুকিয়ে আছে, কিন্তু আমার দেশের বৈজ্ঞানিকদের চোখ সে দিকে বড় একটা যায় না। আমার আশা, আমার এ অনুবাদ পড়ে (মূল জার্মান অথবা ইংরেজী-দুটোই ব্লুমরিশের আপন-হাতের লেখা- কলকাতার বইয়ের বাজারে দেখতে পাই না) আমাদের বৈজ্ঞানিকদের, বিশেষ করে তরুণ বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টি সে দিকে যাবে। আর, তার ফলে দুটো-পাঁচটা ব্লুমরিশ হয়তো এ পোড়া বাংলাদেশেও জেগে উঠবেন।
বলেছি, এ অনুবাদকর্ম আমার পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল। তাই সমগ্র পাণ্ডুলিপিটি তুলে দিয়েছিলুম কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, ডঃ প্রতীপ চৌধুরী মহাশয়ের হাতে। অপরিসীম ধৈর্যে এবং অশেষ যত্নে তিনি বিচার করেছেন এর প্রতিটি পঙ্ক্তি, প্রতিটি প্রয়োগ এবং এর প্রতিটি পরিভাষা। তাঁর কাছ থেকে, ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত, এ বই ছাপতে দেবার হিম্মত আমার ছিল না। এখন আশাকরি, যথাসম্ভব নির্ভুল অনুবাদই এখন আমার পাঠক-পাঠিকাদের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। ডঃ চৌধুরীর কাছে এ বাবদ আমার ঋণ যে কতখানি, তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না, বরং বলতে গিয়ে তাঁকে হয়তো ছোটই করে ফেলবো।
এই সঙ্গে আরো দুএকজনের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করলে অন্যায় হবে। বাক্যের প্রয়োগ সম্পর্কে আমার সাহিত্যিক বন্ধু এবং সহকর্মী শ্রীযুক্ত তুলসীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধায় বড় খুঁতখুঁতে, আমার -,নানা ত্রুটি তিনি নানা সময়ে ধরিয়ে দিয়েছেন, দিয়েছেন সংশাধনা করে। এ বাপারে তিনি আমার বড় অভিধান-।আর জার্মান অনুবাদে আমাকে দয়া করে সাহায্য করেছে শ্রীব্রজগোপাল মুখোপাধায় এবং ইউএসআইএস-এর শ্রীমতী অনসূয়া সেন।
প্রচ্ছদপট এঁকে দিয়ে সাহায্য ক্যরেছেন আমার তরুণ বন্ধু, শিল্পী শ্রীঅমল ঘোষ। আর যিনি সুদূর ক্যালিফর্নিয়া থেকে নানা প্রসঙ্গের -নানা ব্যাখ্যা এবং ঢীকা জুগিয়েছেন- বারেবারে পরম যত্নে, দিয়েছেন- প্রভূত উৎসাহ তাঁর গ্রন্থের বাঙলা অনুবাদের জন্য-, সেই পরম শ্রদ্ধেয় যস্ত্রবিৎ শিরোমণি, শ্রীযুত য়োসেফ এফ ব্লুমরিশকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
সবশেষে আমার পাঠক-সাধারণকে অনুরোধ করবো, 'পরিশিষ্টটা' পড়বেন না-, ওটা বড় কটমটো ব্রুমরিশ ওটুকু লিখেছেন নেহাতই যন্ত্রবিৎদের প্রয়োজনে-, তাই আমি বলি, ওটুকু তাঁদের জন্যেই তোলা থাক। বাকীটুকু সুখপাঠ্যও বটে, পরম বিস্ময়করও বটে।
সূচনা একটা টেলিফোন। ছেলে 'ক্রিস্তফ' লং আইল্যান্ড থেকে হান্টসভিল এ ফোনে আমায় বললে, সে একটা অদ্ভূত বই পড়েছে, বহির্বিশ্ববাসী মানুষের পৃথিবীতে পদার্পণ সম্পর্কে। বইটার নাম 'দেবতা কি গ্রহান্তরের মানুষ?' লেখক, কে এক দানিকেন।
আমি যন্ত্রবিৎ। জীবন শুরু করেছি ১৯৩৪ সালে বিমানের নকশা দিয়ে। আজ আমার কাজ হচ্ছে প্রকান্ড প্রকান্ড রকেট আর মহাকাশযান নিয়ে। এসব বই আমার কাছে সাময়িক চিত্তবিনোদনের উপাদান বৈ আর কিছু নয়। জানি, ওসব বইয়ে থাকে অদ্ভূত বিশ্ময়কর নানা ঘটনার বিবরণ। কিন্তু সে ঘটনা কবে ঘটেছে, কোথায় ঘটেছে তার কোনো হদিশ কখনো মেলে না। তাই 'দানিকেন' যখন হাতে এলো তখন খানিকটা উন্নাসিকতা নিয়েই পড়তে শুরু করলুম। পড়তে পড়তে হেসেছি, মজা পেয়েছি। মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে। শেষকালে এসে পড়লুম সেইখানে, যেখানে দানিকেন ঋষি ইজেকিয়েল এর প্রসঙ্গ তুলেছেন। ইজেকিয়েলের উদ্ধৃতিসমূহের ভেতর প্রযুক্তি সংক্রান্ত অস্পষ্ট বয়ানগুলোকে তিনি মনে করেছেন, মহাকাশযানের বর্ণনা। সে সম্পর্কে তিনি যেসব বক্তব্য রেখেছেন, যেসব দাবী করেছেন সে সম্পর্কে, তা আমার এলাকার অন্তর্ভূক্ত। মেজাজ চড়ে গেল। মনে মনে বল্লুম, দাঁড়াও বাইবেল খুলে দেখিয়ে দিচ্ছি, কোথায় তোমার ভূল। বুকে তখন সত্যি কত সাহস!
কিন্তু বাইবেল খুলে দু'পাতা ওল্টাতে না ওল্টাতেই হাসি মিলিয়ে গেল। ব্যঙ্গ পর্যবসিত হল অসীম কৌতূহলে। তারপর যে অভিজ্ঞতা লাভ করলুম, তা অপূর্ব, অদ্ভূত, অভূতপূর্ব। সে অভিজ্ঞতা আমার অবসর সময়ের গবেষণার ফল—আমার নিয়োগকর্তা 'নাসা' (NASA) যে সে ব্যাপারে মাথা ঘামান না।
এমন চরম পরাজয় যে এমন পরম পুরষ্কার, এমন পরম আনন্দের ডালি আমার হাতে তুলে দেবে তা আমার স্বপ্নের অগোচর ছিল।
য়োসেফ এফ্ ব্লুমরিশ
পরিবেশ
আমার এ বই গবেষণার ফল। গবেষণা যেন প্রশ্ন, ফলে গবেষক এবং তার গবেষণার বিষয়বস্তুর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন, অনেক দূর পথ। জিজ্ঞাসুর উচিত নয়, জিজ্ঞাসার বস্তর অস্তিত্ব সম্পর্কে স্থির নিশ্চয় হওয়া। তার প্রথম প্রয়োজন, একটা 'হাঁ' অথবা একটা 'না' এর।
প্রকৃত গবেষণার মূলকথা, বাস্তবতা। কিন্ত মানসিক নম্রতা ব্যতিরেকে বাস্তবতা সম্ভবে না, কারণ প্রকৃতিগতভাবে আমরা কেউই বস্তুতাস্ত্রিক নই। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত আছে, যার মূল বহুদূর বিস্তৃত, এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তা লুকিয়ে থাকে জ্ঞানের সীমার বাইরের অন্ধকারে। মতামত থাকাটা আমাদের অধিকারও বটে, কর্তব্যও বটে। গবেষণার ফল থেকে যদি প্রমাণ হয়, সে মত ভুল, তাহলে তা পরিবর্তন করা, বুদ্ধিগতভাবে বাধ্যতামূলক। এ যেন যুদ্ধের আহ্বান, এড়ানো বিষম দায়। বস্তুতঃ, সে একটা দ্বন্দ, এবং সে দ্বন্দ্ব আমাদের বস্ততান্ত্রিকতা, আমাদের বুদ্ধিমত্তার কষ্টিপাথর।
গবেষণার যলও সবার কাছে সমান অর্থবহ বা সমান প্রত্যয়-জ্ঞাপক নয়। ব্যক্তিবিশেষে বুদ্ধির বিচারে ঘটে তারতম্য। কোন বিষয়ে তর্কপ্রবণতা নির্ভর করে বিষয়ের গুরুত্বের ওপর। কিন্তু বিযয়বস্তর ওপর বাস্তবতা আরোপ করলে তর্কের বিষয়বস্ত হালকা হয়ে যায়। ফল্বে তর্ক পর্যবসিত হয় আলোচনায়, আলাপচারীতে। সে তর্ক মতের ঐক্যেও পরিণত হতে পারে।
তাই বাস্তবতার খাতিরে ইজেকিয়েলবর্ণিত মহাকাশযানের সত্যতা এবং তার প্রযুক্তিগত যৌক্তিকতা সম্পর্কে আমি যস্ত্রবিদ্যা-সংক্রান্ত প্রমাণ উপস্থিত করছি। আর সেই সঙ্গে উপস্থিত করছি, সেই সংক্রান্ত ঘটনাবলী এবং তাদের সংঘটন।
কোন ব্যবহারিক জ্ঞান, তথা অভিজ্ঞতা না থাকায় ইজেকিয়েল যা দেখেছেন, তার বর্ণনা করতে গিয়ে প্রায় ক্ষেত্রই রূপকের সাহায্য নিয়েছেন। বর্ণনার বস্তর সঙ্গে পরিচয় না থাকলে সে রূপক রহস্যময় হয়ে ওঠে, বিভ্রান্তিকর হয়ে পডে। কিন্তু তাঁর
বর্ণনার গভীরে নাবলে দেখা যায়, তাঁর প্রতিবেদন বী আশ্চর্য নিখুঁত এবং দ্যর্থহীন। আর গভীরে নাবলেই প্রতিবেদনের সবটুকু পরিষ্কার হয়ে ফুটেও ওঠে।
মনে হয়, ইজেকিয়েল সত্যের উপলব্ধি করেছিলেন বেশ তাড়াতাড়িই। আমাদের সৌভাগ্য যে মহাকাশযানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল, কুড়ি বছরেরও বেশি কাল। তার ফলে, একটি বিশেষ-ধরনের মহাকাশযানের উল্লখ কথা প্রসঙ্গে একটু-আধটু না করে,
তাঁর পৌনঃপুনিক পর্যবেক্ষণের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করতে সমর্থ হয়েছেন।
সেই মহাকাশযানের গঠন এবং পরিচালন ব্যবস্থার বর্ণনায় তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার যে পরিচয় তিনি দিয়েছেন, তা অপূর্ব এবং অতুলনীয়।
ইজেকিয়েল তাঁর পুঁথির সূচনা করেছেন, চক্রাকার কক্ষপথ থেকে, নেবে আসা একটি মহাকাশযানের পৃথিবীপৃষ্ঠে অবতরণের বর্ণনা দিয়ে। তাঁর বর্ণনায় বিবরণ দিয়েছেন, মহাকাশযানটির প্রধান অংশসমূহের। সবচেয়ে বড় কথা তাঁর শেষ মহাকাশযান দর্শনের বর্ণনাতেও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সে-যান তাঁর বিশ বছর আগে দেখা যানটিরই অনুরূপ।
যানটির চালকদের কথাও বলেছেন ইজেকিয়েল। তিনি শুনেছেন তাদের কথা বলতে, লক্ষ্য করেছেন তাঁদের চালচলন। আর, একবার দেখেছেন একটা অদ্ভূত ঘটনা ঘটতে। তাতে অংশ প্রহণ করেছে চালকের আহ্বানে আগত, বিমানাঙ্গনের একটি কর্মচারী। ইজেকিয়েল নিজেও উড্ডয়নে অংশগ্রহণ করেছেন। দুবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দুটো মন্দিরে। কিন্তু সে মন্দির য়ে কোথায় এবং কি তাদের গুরুত্ব, সে রহস্য আজো অসমাহিত।
ইজেকিয়েলের প্রতিবেদন নিখুঁত করে বুঝতে হলে প্রয়োজন, সে-যানের অংশসমূহের এবং তাদের কার্যপ্রণালীর সযত্ন বিশ্লেষণ এবং সে-বিশ্লেষণ হবে মহাকাশযান এবং রকেট সম্পর্কিত আমাদের আধুনিক জ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে। দ্রুত সাফল্য এসেছে এ পদ্ধতিতে। আরো বিশদ আনোচনায় এবং অনুসন্ধানে দেখেছি, ইজেকিয়েলের বর্ণনা আশ্চর্যরকম নিখুঁত। তাঁর প্রতিবেদনে প্রতিফলিত বর্ণনার প্রাচুর্য এবং যাথাযথ্য থেকে অবাক মানি, কী অপূর্ব তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং কী অদ্ভূত তাঁর স্মরণশক্তি। তারই দৌলতে আজ সম্ভব হয়েছে একটা সরল নকশা তৈরী করা। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে সম্ভব হয়েছে যানটির ওজন, আয়তন এবং কর্মক্ষমতাকে সংখ্যায় নির্দেশ করা। এমনি করে এই প্রথম সম্ভব হল, মহাকাশযানের আবছা ছবিসম্বলিত একটি সুপ্রাচীন প্রতিবেদন থেকে যানটিকে মুক্ত করে আধুনিক যন্ত্রবিজ্ঞানের ভাষায় রূপদান করা। এ-তাবৎ যাদের অথহীন মনে হয়েছে এ-
অনুপ্রবেশের ফলে সম্ভব হয়েছে অমন আরো নানা ঘটনার ব্যাখ্যা দান।
লব্ধ ফল থেকে এমন একটি মহাকাশযান বেরিয়ে আসে যা, সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, প্রয়োগসম্ভব তো বটেই কার্যকরতা এবং উদ্দেশ্যের দিক থেকেও সুপরিকল্পিত। সবচেয়ে বিস্মিত হই, যখন দেখি, আবিষ্কৃত প্রযুক্তিটি উদ্ভট তো নয়ই, বরং তা আমাদের আজকের ক্ষমতার প্রায় নাগাল অর্থাৎ আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের নাগালের একটুখানি বাইরে। লব্ধ ফল থেকে আরো একটা কথা জানা যায়, মহাকাশযানটি পৃখিবীপ্রদক্ষিণরত একটি মূলযানের সঙ্গে একযোগে ক্রিয়াশীল।
এরপর উদ্ভট যা কিছু থাকে, তা হল, ধরা-ছোঁয়ার আওতায় একান্ত বাস্তব একটি মহাকাশযানের অস্তিত্ব ছিল, আজ থেকে ২৫০০ বছরেরও বেশি আগে।
একথা সত্যি যে গবেষণালব্ধ এইসব ফল, বিগত শত শত শতাব্দী ধরে অনেক অনেক পণ্ডিত এবং আরো অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষের দেওয়া ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলবে না। একটা নিতান্ত সহজ কথা মনে রাখা দরকার ষে এই সুদীর্ঘকালের মাঝে মানুষের হাতে গড়া কোন উড্ডীন যান, কোন রকেট পৃথিবীর আকাশে কোন রেখাপাত করেনি। ইজেকিয়েল-ব্যাখ্যায় তাই উড্ডীন কোন যানের কথাই ওঠেনি। সে ব্যাখ্যা সেকালের উপযুক্ত পথেই এগিয়েছে ধর্ম এবং অতীন্দ্রিয়বাদের মাধ্যমে। তবু সেকালের মানুষের প্রচেষ্টাকে খাটো করা একান্ত গর্হিত কাজ হবে।
তাছাড়া, একটা কথা বিশেষ করে জানা দরকার, ইজেকিয়েলের প্রতিবেদনের প্রযুক্তিসম্ভব ব্যাখ্যা দেওয়ার,ক্ষমতা আমাদের হয়েছে এই সেদিন থেকে,- ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে। সেই সময় নাসার লাংলী রীসার্চ সেন্টারের একজন বড যম্ভ্রবিৎ রজার এ আণ্ডার্সন 'গঠন প্রযুক্তি ' (Structures technology) শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তাতে এমন একাটি মহাকাশযানের পরিকল্পনা এবং গঠনের বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন, যা কোন গ্রহের বাতাবরণে প্রবেশ করার উপযুক্ত। মূলদেহের ঠিক সেই অবয়বই দেখতে পাই ইজেকিয়েলের ওই মহাকাশযানে। সেই মূল সম্ভাবনার জ্ঞান ছাড়া ইজেকিয়েলের প্রতিবেদনের প্রযুক্তিগত ব্যাখ্যা দান আজো সম্ভব হত না।
বহির্জাগতিক সভ্যতাসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব, কি সম্ভব নয়, এ তর্ক আজ জগৎজোড়া। নানা বৈজ্ঞানিক এবং যন্ত্রবিৎ সংস্থা আজ এ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। মতের বহুবিধ বৈষম্য থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে, তাঁরা সবাই একমত। একথা সবাই এক বাক্যে স্বীকার মানেন যে আমরা আজ এমন সব সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি (কিংবা তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে), বিবর্তনের পথে যারা আমাদের সমপর্যায়ে আছে বা আমাদের ছাডিয়ে গেছে। অতএব সে রকম একটা অভিযানে যে পরিমাণ প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং আর্থিক সঙ্গতির প্রয়োজন হবে তার একটা মোটামুটি হিসেবও আমরা করতে পারি। আর্থিক ব্যাপারটাও গুরুত্বপূর্ণ, কেননা ধরে নিতে পারি, বহির্জাগতিক সভ্যতাসমূহেও মূল্যমানের ধারণা জন্মেছে ফলে লন্নীর সমস্যা তাদেরও আছে। এই ধারণার সঙ্গে ইজেকিয়েলের দেখা সত্যিকার মহাকাশযান সম্পর্কিত বাস্তব ঘটনাকে এক করলে, বিশ্বাস করতে বাধে যে তাদের অভিযান শুধু একটি মাত্র মানুষে সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে একথাও ধরে নিতে হয় যে কাল এবং স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সে সব অভিযান ছিল দূর-বিস্তৃত। সে বিস্তারের কোনো নজির থাকলে বহির্জাগতিক গমণাগমন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃহত্তর হতে পারত। এ সম্পর্কে গবেষণা করতে হলে প্রত্নবিৎ, ভাষাবিৎ এবং সর্বোপরি যন্ত্রবিৎকে একযোগে কাজে নাবতে হবে।
অবশ্য, এ গবেষণায় বড় সুবিধে হত, ভেঙ্গে পড়া কোন মহাকাশযানের একটা ধবংসাবশেষ কোথাও থাকলে। অমন ধবংসাবশেষের সন্ধান পেলে অনেকেই বিশ্বাস করতেন, প্রাগিতিহাসের কালে বা ইতিহাসের আদিকালে মহাকাশযানের অম্ভিত্ব সত্যিই ছিল। এ ধরনের অবিশ্বাস এবং অবিশ্বাসীর আনুরূপ্য যথেষ্ট সীমাবদ্ধ, কেননা আমাদের ক্ষেত্রে সংখ্যা এবং প্রযুক্তিসংক্রান্ত ব্যবহারিক জ্ঞান এবং সেই সঙ্গে সাহিত্যিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার বিশ্বাসের স্থান দখল করে। সে যাই হোক, ব্যক্তিগত ধারণা ছাড়াও, বাস্তব কোন আবিষ্কার এমনই সিদ্ধান্তমূলক হবে যে সে প্রশ্নের কিছু আলোচনা এখানে অবান্তর হবে না।
আপাতত, প্রাসঙ্গিক তথ্যের একমাত্র উৎস প্রত্নতত্ত্ব। তার প্রাথমিক কার্যক্ষেত্র মনুষ্যবসতির আশপাশে। অপর পক্ষে, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, জনপদে অথবা জনপদের কাছাকাছি কোথাও মহাকাশযানের ভেঙে পড়া, নিদেন হুড়মুড়িয়ে নেবে পড়ার সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই হয়। কিন্তু অমন অঘটন যদিও বা ঘটে, তাহলে তার ধবংসাবশেষকে দ্রুত অপসারিত করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পুনর্নির্মিতহবে ত্বরিতে। একথ্য সত্যি যে মহাকাশযানের ধাতুর টুকরো কিংবা তার ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির অংশসমূহ ক্ষয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মৃত্তিকাস্তরে থ্বেকে যেতে পারে। কিন্তু কোদাল-কুডুল-বুরুশ নিয়ে কোন প্রত্ববিৎ যে ঠিক ওই জায়গাতেই সে সব বস্তুর খোঁজে নাববেন, এমন সম্ভাবনা মহাকাশ-যানের ধবংসপ্রাপ্তির চেয়েও অনেক কম। ফলে, মনুষ্যবসতির ধারে-কাছে তেমন কোন ধবংসাবশেষ আবিষ্কারের আশায় আপাতত ছাই বিজ্ঞানসম্মত খাঁটি প্রত্নতত্তের বয়স তো সবে কয়েক দশক মাত্র।
শুধুমাত্র সুযোগের অভাবে প্রত্নতত্ত্ব যা পায়নি তার চেয়ে বহুগুণে পূরণ হয়েছে, যা পেয়েছে তা দিয়ে। আমার এ আলোচনার ক্ষেত্রেই অনেক কিছু আজ হাতের নাগাল। অবশ্য সে সব বস্তু থেকে আসল জিনিসটিকে ছেঁকে নিয়ে কাজে ল্যগানো প্রত্নবিদের কর্মনয়। সে কাজ খুব উচুদরের ষন্ত্রবিদের, যাঁর গঠনসংক্রান্ত জ্ঞান সে বস্তুর কার্মিক সম্পর্ক নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
অস্বাভাবিক হলেও সাহিত্যের ক্ষেত্রে ইজেকিয়েলের পুঁথি বৃহত্তর প্রাপ্তি-সম্ভাবনার একটা সুনিশ্চিত প্রমাণ। এক্ষেত্রেও তার মূল্য নিরূপণ যন্ত্রবিদের সামর্থ্যগত। পরবর্তী অনুচ্ছেদসমূহে আমি বারবার বলেছি, যন্ত্রবিদের এগিয়ে আসার কথা। তাঁদের এগিয়ে আসার প্রয়োজন একান্ত করে গঠন এবং গঠনতন্ত্রের বিচারের- উদ্দেশ্যে। এ ধরনের ব্যাপারে অনুসন্ধান এবং বিচার-বিবেচনার কাজ বিজ্ঞানেরই আওতায় পড়ে। জ্ঞানের সীমা নির্ধারণের প্রশ্নই বিজ্ঞানের আলোচনার বস্তু। এই সব সীমার অন্তর্ভুক্ত বাপার যা কিছু তা সব যন্ত্রবিজ্ঞানের কাজ। যন্ত্রবিৎ, বিশেষতঃ নকশাকার যিনি, তিনি অত্যন্ত উন্নত গঠনেরও উন্নতি সাধন করেন, এবং আপন মননশক্তি দিয়ে, যুক্তি দিয়ে তার অবয়বের রূপদান করেন। শুধু অবয়ব মাত্র দর্শনে সমগ্র গঠন-কৌশলটি নির্ধারণ করতে উপযুক্ত ব্যক্তি একমাত্র তিনিই।
এ সংক্রান্ত আর একটা ব্যাপার হল, আমরা ধরে নিই যে সেই আগন্তুকেরা এবং তাদের যন্ত্রপাতি, স্বাভাবিক কারণেই আমাদের চেয়ে ভিন্নতর হবে,- দেখতেও বটে, কাজেও বটে। বহির্জাগতিক সভ্যতা নেহাতই উদ্ভট বা রহস্যময় বলে ধরে নিই বলেই বুঝতে পারি না যে তাদের সঙ্গে আমাদের অমিলের চেয়ে মিল থাকাটাই বেশি সম্ভব। এ বিষয়ে পরে আলোচনা করা যাবে।
আজ বহির্জাগতিক মানুষের আগমনের কথা উঠলেই প্রশ্ন জাগে, 'কোথা থেকে?' এবং 'কেমন করে?' এটা ঠিক যে।রশষ বিল্লষণের পরেও এ দুটি প্রশ্নের জবাবের গুরুত্ব সত্যিসত্যিই জগৎজোড়া। কিন্তু আমাদের কোন জবাব নেই দেবার মত।
আপাতত এই রহস্যের পরিমাণ এত বেশি এবং এত বড় যে আমাদের পক্ষে তাদের সমাধান বের করা সাধ্যাতীত। এ ধরনের চিন্তার সরলতম পরিণতিও যা এবং 'যেহেতু আমরা জানি না তারা কোথা হতে এসেছিল, তাই তারা এখানে আসতে পারে না' বলাও প্রায় তাই একথা সত্যি যে এই পর্বতপ্রমাণ সমস্যার সমাধান এক কথায় বের করা অসম্ভব। তাই আমার মনে হয়, যে-পদ্ধতি অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সেই পদ্ধতিতে কাজ করাই সবচেয়ে ভালো, অর্থাৎ জটিল সমগ্র সমস্যাটিকে ছোট ছোট সমস্যায় এবং প্রশ্নে ভেঙে ফেলা।
ইজেকিয়েলের নির্দেশ ওই পথেই। মহাকাশযানে উপস্থিতির এমন নিখুঁত বর্ণনা তিনি দিয়েছেন যে তাঁর চিত্রণের সত্যতাকে আমরা অঙ্ক কষে এবং আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারি। তাঁর আসল দলিলটির জন্যে আমরা কৃতজ্ঞ, তারই সূত্রে অন্যান্য জায়গা থেকেও তাঁর প্রমাণসম্ভব নজিরের সন্ধান শুরু করতে পারি। এবার তাহলে আমরা আগের উক্তিটিকে শুধরে বলতে পারি, তারা এখানে ছিল, তাই তারা নিশ্চয় এখানে এসেছিল'।
পরিবর্তিত এই পটভূমির পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তার এই নতুন প্রতিফলন, নিঃসন্দেহ, 'কোথা হতে?' এবং 'কেমন করে?' প্রশ্ন দুটিতে ণ্ডরুত্ব আরোপ না করে পারে না। আমার তরফ থেকে বলতে পারি, আমি এ প্রশ্নটিকে বিচার করেছি যন্ত্রবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে, বলতে গেলে প্রযুক্তিগত কৌতূহল বশে। ইজেকিয়েলের পুঁথির সেইসব অংশের ওপর আমার কৌতূহল মূলতঃ নিবদ্ধ ছিল, যে সব অংশে তিনি মহাকাশযানটির বিভিন্ন অংশের রূপ এবং তাদের কার্যাবলীর বর্ণনা দিয়েছেন, অর্থাৎ এক কথায়, যেণ্ডলো আমার পেশাগত কর্মক্ষেত্রের আওতার অন্তর্ভুক্ত। প্রসঙ্গতঃ সেই অংশগুলো, ব্যতিক্রমহীনভাবে বলা যায়, তাঁর শিক্ষামূলক অংশসমূহ থেকে সপূর্ণ পৃথক। তার অন্তর্ভুক্ত প্রযুক্তিগত বন্তুনিচয়ের ভিত্তিতে সমগ্র পুঁথিটির ওপর কিছু অপ্রাযুক্তিক উপসংহারও টানা হয়েছিল।
যে গভীর সন্দেহ নিয়ে এ গবেষণা শুরু করেছিলুম, সে সন্দেহ পর্যবসিত হয়েছে নিতান্তই নিশ্চিত ধারণায়, তার প্রভূত প্রত্যাশার প্রতিশ্রুতি থেকে, বিশেষ করে যখন তার ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তিগত সূত্র এবং তত্বসমূহ আরোপ করে পাওয়া গেল আপাত ন্যায়সঙ্গত নানা পরিণতি। এ গবেষণায়, আজকের মূল্যায়নে সম্ভাব্য বিকাশ এবং উন্নতিকেও ধরে নিতে হয়েছিল। এ নিরীক্ষা থেকে যে সিদ্ধান্তে গৌছোই সে সিদ্ধান্ত থেকে, অমন যান কি থাকা সম্ভব?' এই প্রশ্নের জবাবই শুধু মেলে না, সেই সঙ্গে তার অনুক্ত অংশ, 'ঐতিহাসিক প্রযুক্তি আমাদের আজকের দিনের প্রযুক্তির চেয়ে কতখানি উন্নত ছিল?' সে প্রশ্নের জবাবও মেলে।
এ সবের জবাব অসঙ্গত, উদ্ভট হলে, আমি এ বই লিখতে বসতুম না।
ইজেকিয়েল কে?
যেহেতু আমরা ইজেকিয়েলের প্রতিবেদনটিকে বিশ্লেষণ করবো, করবো তার মূল্যবিচার, তাই তাঁর ব্যক্তিসত্তাটিও বিরাট সিদ্ধান্তের উৎসস্বরূপ। সে প্রতিবেদনের পচাৎপটে যে ব্যক্তিটি দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর শিক্ষা, দীক্ষা, পরিণতির যতদূর সম্ভব হদিস করা তাই একান্ত বাঞ্ছনীয়। এইসব গুণাগুণের বিচার থেকেই তাঁর প্রদত্ত তথ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করা সম্ভব। নিজের গাঁ-গুষ্টি ছেড়ে, নিজের কাজ, পরিবার-পরিজন ছেড়ে যে মানুষ কখনো বাইরে বেরোনা নি, বলা যায়, তাঁর চেয়ে যে মানুষ শিক্ষিত, যাঁর অভিজ্ঞতা ব্যাপক, তাঁর প্রতিবেদনের গুরুত্ব অনেকে বেশি।
সরাসরি খবর মিলতে পারে তাঁর নিজের প্রতিবেদন থেকে। তাঁর পুঁথির কাল শুরু হয়েছে খৃস্টপূর্ব ৫৯৩ অথবা ৫৯২ সালে। তার প্রায় বছর পাঁচেক আগে খৃষ্টপূর্ব ৫৯৭ সাল নাগাত রাজা নেবুকাদ্নেজার তাঁকে আরো অনেক ইহুদীর সঙ্গে নির্বাসিত করেছেন। বেবিলনে তেল-আবিবের মানুষের মাঝে তিনি বাস করেছেন, কালদিয়ার 'কবার' নদীর তীরে। ইজেকিয়েল ছিলেন পুরোহিত। তিনি যে বিবাহিত ছিলেন তা জানা যায়, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী আরম্ভ করার সাড়ে চার বছর পরে, তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর কথার উল্লেখ থেকে। তাঁর বাবার নাম ছিল বুজি।
আরো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায় পরোক্ষভাবে, তাঁর কালের রাজনৈতিক অবস্থা থেকে এবং তাঁর কিছু লেখা থেকে। তাঁর পরিবারের নির্বাসনের কারণে বোঝা যায়, সমাজে তাঁর বিশেষ প্রতিষ্ঠা ছিল, কারণ ৫৯৭ খৃস্টপূর্বাব্দে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী লোকদেরই নির্বাসিত করা হয়েছিল।
তাছাড়া তেল-আবিব ছিল বেবিলনের কাছে, দক্ষিণে। তাই অনুমান করতে পারি, তিনি সেখানকার সু-উচ্চ মিনারটি দেখেছিলেন, নিদেন সে দুর্গের নিখুঁত বর্ণনাও শুনেছিলেন। সম্ভবতঃ তিনি শহরের বিখ্যাত প্রকাণ্ড তোরণ এবং তার সম্মুখের সুপ্রশস্ত বিরাট রাজপথটির বর্ণনাও শুনেছিলেন। আপন দেশের মানুষকে ইজেকিয়েল জানতেন এবং বর্ম-চর্মধারী অনেক সৈন্যও তিনি দেখেছিলেন এবং ঘোড়ায় টানা অনেক রথও নিশ্চয় দেখেছিলেন।
তাঁর বয়স তখন সম্ভবতঃ বছর তিরিশ। তাই মনে হয়, পুঁথিতে উল্লেখিত তাঁর শেষ ভবিষ্যদ্বাণী করার কালে তাঁর বয়স হয়েছিল পঞ্চাশ। তিনি লালিত হয়েছিলেন জেরুসালেমে এবং নির্বাসিত হওয়ার ফলে দুটি বড় সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেছিল। উপরন্তু তাঁর লেখার ভেতর দিয়ে জানা যায়, মিসর সমেত নিকট প্রাচ্যের সংস্কৃতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান যথেষ্ট ছিল। তাঁর প্রতিবেদনের ভেতর আদিমতা বা গ্রাম্যতা কোথাও নেই।
এ সব তথ্যের সমষ্টিত ফল থেকে প্রভূত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যে মানুষটি বেরিয়ে আসেন, তিনি এক উচ্চবিত্ত ইহুদী পরিবারের সন্তান, সুলালিত এবং সুশিক্ষিত।
কোথায় এবং কবে তিনি দেহরক্ষা করেছিলেন, তা আজো অজ্ঞাত। কোথায় তাঁর দেহ সমাহিত করা হয়েছিল, তাও জানা নেই মোটামুটিভাবে যে স্থানটি নির্দেশ করা হয়, তার নাম আল-কিফি। সে-জনপদ বেবিলনের প্রায় পঁচিশ মাইল দক্ষিণে। সে সমাধিস্থান নেহাতই অনুমান-নির্ভর, সে সম্পর্কে সমর্থন নেই কোত্থাও।
ইজেকিয়েল কী দেখেছিলেন?
সমস্ত কল্পনা ভেদ করে, যা কিছু অস্পষ্ট তা সব পরিষ্কার করে ছেঁকে নিয়ে, ইজেকিয়েলের পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁরই চোখ দিয়ে কী দেখতে পাই আমরা? বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত তাঁর পুঁথির প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ সমূহে তাঁর অভিজ্ঞতাপ্রসূত যে সব বর্ণনা আছে, সে সব এখানে উদ্ধৃত করছি তা থেকে বোঝা যাবে, কী আমার লক্ষ্য। প্রয়োজনের খাতিরে একই উদ্ধৃতি বারে বারে দিতে হবে, তা সত্ত্বেও মনে হয়, সে উদ্ধৃতি এখানে দিলে, পূর্ণাবয়ব ছবিটিই ফুটে উঠবে।
ইজেকিয়েলের পুঁথি
১।১ - ত্রিংশবৎসরের চতুর্থমাসে, মাসের পঞ্চমদিবসে, যখন আমি কবার নদীর তীরে নির্বাসিত লোকদের মধ্যে ছিলাম, তখন স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর আমি ঈশ্বরীয় দর্শন প্রাপ্ত হইলাম।
১।২ - মাসের পঞ্চম দিবসে (রাজা যিহোয়াখীনের নির্বাসনের পঞ্চম বৎসরের),
১।৩ - কলদীয়দের দেশে কবার নদীতীরে বুজির পুত্র, ইজেকিয়েল যাজকের নিকটে সদাপ্রভুর বাক্য আসিয়া উপস্থিত হইল এবং সেই স্থানে সদাপ্রভু তাঁহার উপরে হস্তার্পণ করিলেন।
১।৪ - আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, উত্তর দিক হইতে ঘূর্ণবায়ু এবং উজ্জ্বল আভাপরিবৃত বৃহৎ মেঘ আসিল, এবং তাহা হইতে অবিরাম অগ্নিশিখা বিচ্ছুরিত হইতেছিল ও অগ্নির মধ্যস্থানে প্রতপ্ত ব্রঞ্জের ন্যায় প্রভা ছিল।
১।৫ - আর তাহার মধ্য হইতে চারি প্রাণীর মূর্তি প্রকাশ পাইল। তাহাদের আকৃতি এই, তাহাদের রূপ মনুষ্যবৎ।
১।৬ - আর প্রত্যেকের চারি চারি মুখ ও চারি চারি পক্ষ ছিল।
১।৭ - তাহাদের চরণ সোজা, পদতল গোল, এবং তাহারা পরিষ্কৃত ব্রঞ্জের তেজের ন্যায় চাকচিক্যশালী।
১।৮ - তাহাদের চারি পার্শ্বে পক্ষের নিচে মানুষের হস্ত ছিল। চারি প্রাণীরই মুখ ও পক্ষ এইরূপ ছিল।
১।৯ - তাহাদের পক্ষ পরস্পর সংযুক্ত, প্রত্যেকে সম্মুখ দিকে গমন করিত, গমনকালে তাহারা ফিরিত না।
১।১০ - তাহাদের মুখের আকৃতি এই, সম্মুখে তাহাদের মানুষের মুখ ছিল, আর দক্ষিণ দিকে চারিটির সিংহের মুখ, বাম দিকে চারিটির গরুর মুখ, আবার পচাতে চারিটির ঈগলপক্ষীর মুখ ছিল।
১।১১ - উপরিভাগে তাহাদেরমুখ ও পক্ষ বিস্তৃত ছিল, প্রত্যেক প্রাণীর দুই দুই পক্ষ ছিল, এক একটির দুইদুই পক্ষ জোড়া ছিল, এবং আর দুইদুই পক্ষে গাত্র আবৃত ছিল।
১।১২- আর তাহারা প্রত্যেকে সম্মুখ দিকে গমন করিত, যে দিকে যাইতে আত্মা বাধ্য করিত, তাহারা সেই দিকে গমন করিত, গমনকালে ফিরিত না।
১।১৩ - প্রাণীদের মধ্যস্থলে প্রজ্বলিত অঙ্গার সদৃশ কোন বস্তু ছিল, মশালের আভার সদৃশ সেই অগ্নি ওই প্রাণীদের মধ্যে গমনাগমন করিত, সেই অগ্নি তেজোময়, ও সেই অগ্নি হইতে বিদুৎ নির্গত হইত।
১।১৪ - আর ওই প্রাণীগণ বিদ্যুৎল্লতার আভার ন্যায় দ্রুত ইতস্ততঃ যাতায়াত করিত।
১।১৫ - আমি যখন ওই প্রাণিদিগকে অবলোকন করিলাম, দেখিলাম, ভূতলে প্রাণিদিগের পার্শ্বে চক্র ছিল, এক একটির জন্য এক এক চক্র ছিল।
১।১৬ - চারি চক্রের আভা বৈদূর্যমণির প্রভার ন্যায়, চারিটির রূপ একই, এবং তাহাদের রচনা চক্রর মধ্যস্থিত চক্রের ন্যায় ছিল।
১।১৭ - গমনকালে ওই চারি চক্র চারি পার্শ্বের যে কোন এক পার্শ্বে গমন করিত, গমনকালে ফিরিত না।
১।১৮- চারি চক্রের নেমি ছিল, এবং সেই চারিটি নেমি চক্ষুতে পরিপূর্ণ ছিল।
১।১৯ - আর প্রাণিগণের গমনকালে তাহাদের পার্শ্বে ওই চক্রগুলিও গমন করিত, এবং প্রাণিগণের ভূতল হইতে উত্থাপিত হইবার সময়ে চক্রগুলিও উত্থাপিত হইত।
১।২০ - যে কোন স্থানে আত্মার ইচ্ছা হইত, সেইস্থানে তাহারা যাইত, কেননা আত্মা তাহাদিকে চালনা করিত, এবং তাহাদের পার্শ্বে পার্শ্বে চক্রগুলিও উঠিত, কেননা সেই প্রাণীর আত্মা ওই চক্রগণে ছিল।
১।২১ - উহারা যখন চলিত, ইহারাও তখন চলিত, এবং উহারা যখন স্থগিত হইত, ইহারাও তখন স্থগিত হইত, আর উহারা যখন ভূতল ইহতে উত্থাপিত হইত, চক্রগুলিও তখন পার্শ্বে পার্শ্বে উত্থাপিত হইত, কেননা সেই প্রাণীর আত্মা ওই সকল চক্রে ছিল।
১।২২ আর সেহ প্রাণিগণের মস্তকের উপরে এক বিতানের আকৃতি ছিল, তাহা স্ফটিকের আভার ন্যায় তাহাদের মস্তকের উপরে বিস্তারিত ছিল।
১।২৩ - সেই বিতানের নিচে তাহাদের পক্ষসকল পরস্পরের দিকে ঋজুভাবে প্রসারিত ছিল, এবং প্রত্যেক প্রাণীর দুই পক্ষ তাহাদের গাত্র আচ্ছাদন করিয়াছিল।
১।২৪ - আর তাহাদের গমনকালে আমি তাহাদের পক্ষসকলের ধ্বনি শুনিলাম, তাহা মহা জলরাশির কল্লোলের ন্যায়, সর্বশক্তিমানের বজ্রের ন্যায়, সৈন্যসামন্তের ধ্বনির নায় তুমুল ধ্বনি। দণ্ডায়মান হইবার সময়ে তাহারা আপন আপন পক্ষ শিথিল করিত।
১।২৫ - তাহাদের মস্তকের উপরিস্থ বিতানের উর্ধ্বে এক রব হইতেছিল, দণ্ডায়মান হইবার সময়ে তাহারা আপন আপন পক্ষ শিথিল করিত।
১।২৬ - আর তাহাদের মস্তকের উপরিস্থ বিতানের উধের্ব নীলকান্তমণিবৎ আভাবিশিষ্ট এক সিংহাসনের আকৃতি ছিল, সেই সিংহাসনের আকৃতির উপরে মনুষ্যের আকৃতিবৎ এক মূর্তি ছিল, তাহা তাহার ঊর্ধ্বে ছিল।
১।২৭ - দেখিলাম, তাহা যেন প্রতপ্ত ব্রঞ্জের ন্যায় আভাবিশিষ্ট অগ্নির আভা যেন তাহার মধ্যে চারিদিকে ছিল। তাঁহার কটির আকৃতি অবধি উপরের দিকে এবং তাঁহার কটির আকৃতি অবধি নিচের দিকে অগ্নিবৎ আভা দেখিলাম, এবং তাঁহার চারিদিকে তেজ ছিল।
১।২৮ - বৃষ্টির দিনে মেঘে উৎপন্ন ধনুকের যেমন আভা, তাঁহার চারিদিকের তেজের আভা সেইরূপ ছিল। ইহা সদাপ্রভুর প্রতাপের মূর্তির আভা। আমি তাহা দেখিবামাত্র উপুড় হইয়া পড়িলাম, এবং এক ব্যক্তিকে কথা বলিতে শুনিলাম।
(http://i60.tinypic.com/2rnvfiu.jpg)
(http://i58.tinypic.com/15i44sy.jpg)
(http://i60.tinypic.com/8xph10.jpg)
কিসের বর্ণনা ইজেকিয়েল দিচ্ছেন?
কোন গৌরচন্দ্রিকা ছাড়াই তিনি তাঁর প্রতিবেদনের সূত্রপাত করেছেন। প্রথম দর্শনকালে যে-ধরনের ভয়ঙ্কর তীব্রতার সম্মুখীন তিনি হয়েছিলেন, সেই একই ধরনের তীব্রতা তিনি নিক্ষেপ করেছেন তাঁর পাঠকবর্গের ওপরে। সেই মুহূর্তে রকেট-ইঞ্জিন চালু
হওয়ায় তার ঘনগর্জন পারিপার্শ্বিক নৈঃশব্দকে ভেঙে খানখান করে দিলো। তিনি চমকে মুখ তুলে চাইলেন। একটা সাদা মেঘের মাঝখান থেকে ইঞ্জিনের আগুন ছুটছে। তারই কাছ থেকে আসছে একটা চোখ-ঝলসানো আগুন আর তীব্র ভীষণ গর্জন। মনে হচ্ছে, যেন আকাশ ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে ধোঁয়ার ভেতর থেকে চারটে লম্বামতন কী যেন দেখা যাচ্ছে, তাদের ওপরে কী যেন একটা নড়ছে আবছা মতন। তাদের নিচের দিকটা যেন সোজা সোজা পায়ের মত, আর তাতে গোল গোল ক্ষুর। মুহর্তের জন্যে ইজেকিয়েলের মনে হল, চেহারাগুলো যেন মানুষের। কিন্তু পর মুহর্তে ধোঁয়া কেটে গেল, রকেট-ইঞ্জিনের আগুনও নিবে গেল তখন মনে হল, ওগুলো আসলে পাখা ঘুরছিল। সে পাখার নিচে, দেহের পাশে যেন একটা হাত ঝুলছিল। তাদের ওপরে, তাঁর মনে হল, যেন মানুষের মুখের আবছা গড়ন। মানুষের চেহারার সঙ্গে তাদের সাদৃশ্য নিশচয় পরিষ্কার নয়, তবু কতকটা ওইরকম। এখন তাঁর সামনে যাদের দেখছেন, তারা নিশ্চয় প্রাণবন্ত, তাঁর কাছেই যে তারা মাটিতে নাবছে।
সব সময় মনে রাখতে হবে, ইজেকিয়েল যা দেখছেন, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না, কেননা তা তাঁর ব্যাখ্যার অসাধ্য। তিনি যা দিচ্ছেন, সে শুধু তাঁর দর্শন এবং শ্রবণের অনুভূতির শ্রেষ্ঠ বর্ণনা। সে-বর্ণনা দিতে, সে-ঘটনার বিবরণ পেশ করতে, তাঁর হাতে যতটুকু উপায় ছিল, সে সবটুকুর সদ্ব্যবহার তিনি করেছেন। ১ নং এবং ২ নং ছবি দুটো দেখুন। পৃথিবীর উপরকার কোন কক্ষপথ থেকে উড্ডয়নের শেষ পর্যায়ে এ বর্ণনার মহাকাশযানটিকে চিনতে হলে যৎসামান্য কল্পনাও থাকা প্রয়োজন। তৃতীয় চিত্রটি প্রাচীন ব্যাখ্যার চিত্ররদপের একটি নিদর্শন।
মহাকাশযানটি মূলযান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উড্ডয়ন শুরু করেছিল সম্ভবতঃ ২২০ নৌ-মাইল (Nautical mile = বিষুবরেখা বরাবর দ্রাঘিমার এক মিনিট - ৬০৮২৬৬ ফুট দূরত্ব) ওপর থেকে। পৃথিবীর বাতাবরণের ভেতর দিয়ে নাববার সময় তার বায়ুগতীয় বাধা (aerodynamic drag ) তার গতি হ্রাস করেছে, তারপর আরো নিচে নেবে আসার পর, স্বল্পকালের জন্যে রকেট-ইঞ্জিন চালু করে তার গতি আরো কমিয়েছে, যাতে বাকি পথটুকু নাবতে হেলিকপ্টারগুলোকে ব্যবহার করা যায়। উড্ডয়নের এই শেষ পর্যায়ে যখন রকেট-ইঞ্জিন চালু করা হয়েছিল, তখন সে-যান তাঁর নজরে পড়েছিল এবং তারই বর্ণনা তিনি দিয়েছেন।
তারপর যখন মাটি থেকে কয়েক ফুট মাত্র ওপরে ভাসতে ভাসতে মহাকাশযানটি নাববার উপযুক্ত একটি স্থান সন্ধান করছে তখন তিনি তাকে দেখছেন, আরো ভালো করে। অবতরণ কালে অল্পক্ষণের জন্যে নিয়ন্ত্রক রকেটগুলোর সক্রিয় হয়ে ওঠাটা তাঁর কাছে অদ্ভুত ঠেকেছে, তাইতার ব্যাখ্যা করেছেন, শূন্যে বিদ্যুৎ চমকের মত বলে। তারই ফলে তাঁর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে বিচিত্র 'প্রাণীদের' মাঝখানকার জায়গায়, দেখতে পেয়েছেন, গনগনে জ্বলন্ত কয়লার মত শক্তি-উৎপাদকের বিকিরকটিকে (radiator of the reactor)।
মহাকাশযান নেবেছে।
উড্ডয়নকালে হেলিকপ্টারের নিচের দিকে যেখানে চাকাগুলো লুকিয়েছিল, এখন সেখান থেকে তারা বেরিয়ে পড়েছে গোল ক্ষুরওলা খাড়া লম্বা পায়াগুলো এখন আর মাটি স্পর্শ করে নেই।
চাকা!
এই প্রথম সেই বিভ্রান্তিকর, বিচিত্র ঘটনার ভেতর তিনি আবিষ্কার করলেন এমন একটি বস্তু, যা তাঁর বিশেষ পরিচিত, যার ওপর তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারেন। দীর্ঘকাল ধরে সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা এবং বারে বারে তাদের বিশেষ এবং দীর্ঘ বর্ণনা দেবার কারণ ওইটিই। বিশ বছর পরেও নতুন করে মহাকাশযানের বর্ণনা দিতে গিয়ে সেই চাকাই আবার কাজে লেগেছে। খুব ভালো করে কাছ থেকে তাদের দেখে তিনি আবার অবাক মেনেছেন।
কেমনতরো চাকা সেগুলো!
রঙ তাদের হালকা হরিতাভ-নীল। সে চাকার গতিকে তিনি বুঝতে পারেননি। যে-চাকার সঙ্গে তিনি পরিচিত, এ চাকার ঘূর্ণন তো তার সঙ্গে মেলে না। প্রত্যেকটা চাকার গতি এত বেশি যে তাঁর মনে হয়েছে, বুঝি একটার ভেতরে অনেকগুলো চাকা আছে। তারপর, তিনি বুঝতে পারেননি, মাটির উপরে তারা কি ছাঁদে ঘুরছে। যেসব চাকার সঙ্গে তাঁর পরিচয় আছে, তারা তো গড়ায় একদিকে। দিক পরিবর্তন করতে হলে গোটা চাকাটাকেই নতুন দিকে ফেরাতে হয়। কিন্তু এখানে দেখছেন, যেখানে তারা দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে তাদের যে কোন দিকে ফেরানো যায়, গোটা চাকাটাকে না ঘুরিয়েই। ব্যাপারটা সহজে মেনে নেননি তিনি, নিজের পর্যবেক্ষণকে নিজে পরীক্ষা করেছেন বারে বারে, দেখেছেন প্রাণবন্ত জীবগুলো নিজেরাই ঘোরে কিনা, এবং সেইসঙ্গে চাকাগুলোকে ঘোরায় কিনা। কিন্তু দেখেছেন, তা হয় না।
ইজেকিয়েল সেইসব চাকার কথাই জানেন, যারা ঘোরে, গাড়ির এগোনো বা পিছু-হাঁটার কারণে। নিত্যদিনের এই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর মনে হয়েছে, এক্ষেত্রেও বুঝি চাকাগুলো ঘোরে প্রাণবন্ত জীবগুলোর সঙ্গে। চক্রের ঘুর্ণনব্যবস্থার জ্ঞান তাঁর না থাকারই কথা, ফলে এ অদ্ভূত চাকার ঘূর্ণনের পারম্পর্য যে বিপরীতমুখী হতে পারে এবং প্রাণবন্ত জীবগুলোই যে গতিমান হয়ে ওঠে চাকার সঙ্গে তা তিনি বুঝতে পারেন না।
ইজেকিয়েল দেখেছেন যে কোনো গাড়ি টানলে অথবা ঠেললে চাকা ঘোরে। 'Wheel drive' অর্থাৎ 'চাকা ঘোরানোর ব্যবস্থা', তথা টানা বা ঠেলা ছাড়াও যে চাকা ঘুরতে পারে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। চাকা যে নিজে থেকেই ঘুরতে পারে— যথা মোটর গাড়ির চাকা— তা তাঁর ধারণার বাইরে। তাই চাকা ঘোরার ফলেই 'আত্মারা' ঘুরতে ফিরতে পারছে, এটা না বুঝে ভাবছেন, আত্মাদের নড়াচড়ার ফলেই চাকা ঘুরছে।
সব শেষে বলি, যে-চাকার বেড়কে বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে, মাটির ওপর রোধ-বৃদ্ধির নিমিত্ত, সে চাকা তাঁর অভিজ্ঞতা বহির্ভূত। দ্বিমুখী সরণের প্রয়োজনে তৈরী বেড়ের ওপরকার বৃত্তাকার প্রসারকগুলোকে তাঁর মনে হয়েছে চক্ষু'।
তারপর একসময়ে চাকা থেমে গেছে, ইজেকিয়েলও হাঁফ ছেড়ে চোখ ফেরাতে পেরেছেন অন্যদিকে। এতক্ষণে তিনি চোখ তুললেন, প্রাণীদের সেই পাখার দিক থেকে, তাদের ওপরকার প্রকাণ্ড গম্বুজ-সদৃশ মহাকাশযানের দেহের দিকে। সে যেন বিশাল একটা খিলেনের মত মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাদের পেছনে। তিনি দেখছেন, পাখাগুলো আর ঘুরছেনা, এখন তাদের একজোড়া ওপরে আর একজোড়া নিচের দিকে পাট হয়ে যাচ্ছে, সে-প্রাণীদের গাত্র স্পর্শ না করা পর্যন্ত।
এতক্ষণ পর্যন্ত একটা ঘন শব্দ তাঁর শ্রুতিগোচর হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, সে বুঝি পাখার শব্দ। কিন্তু এখন দেখলেন, শব্দ কমে গেছে, পাখাগুলোও থেমে গেছে। আরো আবিষ্কার করলেন, শব্দটা পাখার নয়, সেটা আসছে 'বিতানের' ওপরে কোথাও থেকে। হয়তো
তাঁর মনে হয়েছে, বিতানের সঙ্গে শব্দের কোন যোগ আছে। কিন্তু তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, ঠিক কোথায় সে শব্দের উৎস, কারণ কেন্দ্রীয় শক্তি উৎপাদন ব্যবস্থা বা উচ্চ শক্তি সপন্ন ইঞ্জিনের কথা তাঁর জানার কথা নয়। তাছাড়া, পূর্ণশক্তিতে চালু অবস্থা থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় চালু ইঞ্জিনের শব্দ যে কম হবে, তাও তাঁর জানার কথা নয়।
এখন ইজেকিয়েলের দৃষ্টি খিলেনের পরিধি ছাড়িয়ে আরো ওপরে। দেখছেন, আলো এবং রঙের একটা অবাস্তব আবছায়ার মাঝখানে একটা মানুষ রয়েছে সিংহাসনে উপবিষ্ট। তোঁর পুঁথির অন্যান্য সংস্করণে 'আদম' শব্দের প্রয়োগ আছে,- তারও অর্থ
অবশ্য 'মানুষ'। মহাকাশযানের স্বচ্ছ চালক-কোষটির সরল জ্যামিতিক গঠনের চেয়ে তার আলো এবং রংই বেশি দৃষ্টিসুখকর এবং বর্ণনা করার পক্ষেও ভালো। চালক-কোষে যাঁকে ইজেকিয়েল দেখতে পাচ্ছেন, তিনি মহাকাশযানের অধিনায়ক এবং তাঁর
আসনের সঙ্গে সিংহাসনের সাদৃশ্য সন্দেহাতীত। সে-যানের বিরাটত্বে, মুগ্ধবিস্ময়ে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে তিনি মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। তার পরেই শুনতে পেলেন অধিনায়কের কণ্ঠস্বর।
২।৯ - পরে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, একখানি হস্ত আমার প্রতি
প্রসারিত হইল, আর দেখ, তাহার মধ্যে একখানি জড়ানো পুস্তক ছিল।
২।১০ - তিনি আমার সম্মুখে তাহা বিস্তার করিলেন।
৩।১২- পরে আত্মা আমাকে তুলিয়া লইলেন, আর যেহেতু সদাপ্রভুর প্রতাপ তাঁহার স্থান হইতে উঠিল, আমি আমার পশ্চাৎদিকে মহাভূমিকম্পের শব্দ শুনিলাম।
৩।১৩ - উহা ওই প্রাণিদিগের পরস্পরের পক্ষসমাঘাতের শব্দ এবং তাহাদিগের পার্শ্ববতী চক্রের শব্দ, যাহা মহাভূমিকম্পের শব্দের ন্যায়।
৩।১৪ - আত্মা আমাকে তুলিয়া লইয়া গেল আর আমি মনস্তাপে দুঃখিত হইয়া গমন করিলাম, আর সদাপ্রভুর হস্ত আমার উপরে বলবৎ ছিল।
৩।১৫ - এবং আমি কবার নদীতীরবাসী তেল-আবিবস্থ নির্বাসিতদের কাছে আসিলাম এবং সেইস্থানে সাতদিন তাহাদের মধ্যে আচ্ছন্নর ন্যায় বসিয়া রহিলাম।
৩।২২- পরে সেই স্থানে সদাপ্রভু আমার উপরে হস্তার্পণ করিলেন, আর তিনি কহিলেন, উঠ, বাহির হইয়া প্রান্তরে গমন কর। আমি সেখানে তোমার সহিত কথা বলিব।
৩।২৩ - সুতরাং আমি উঠিয়া প্রান্তরে গমন করিলাম, আর দেখ, সে স্থানে সদাপ্রভুর সেই প্রতাপ দণ্ডায়মান, কবার নদীতীরে যে প্রতাপ দেখিয়াছিলাম, তখন আমি উপুড় হইয়া পড়িলাম।
৩।২৪ - কিন্তু আত্মা আমাতে প্রবেশ করিয়া আমাকে পায়ে ভর দিয়া দাঁড় করাইলেন এবং আমার সহিত কথা বলিলেন এবং কহিলেন।
৮।১ - ষষ্ঠ বৎসরের ষষ্ঠ মাসে, মাসের পঞ্চম দিনে আমি আমার গৃহে উপবিষ্ট ছিলাম এবং যুদার প্রাচীনবর্গ আমার নিকটে উপবিষ্ট ছিলেন, এমনসময়ে প্রভু সদাপ্রভু আমার উপরে হস্তার্পণ করিলেন।
৮।২- তখন আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, মনুষ্যের আকারের এক মূর্তি, তাঁহার নিচে, যাহা তাঁহার কটি বলিয়া মনে হইল, তাহা অগ্নির ন্যায় ছিল, এবং তাঁহার কটির উধর্বাংশ যেন জ্যোতির্ময়, প্রতপ্ত ব্রঞ্জের ন্যায় ছিল।
৮।৩ - তিনি এক হস্তমূর্তি বিস্তার করিয়া আমার মস্তকের কেশগুচ্ছ ধরিলেন, তাহাতে আত্মা আমাকে তুলিয়া পৃথিবী ও আকাশের মধ্যপথে লইয়া গেলেন এবং ঈশ্বরীয় দর্শনক্রমে জেরুসালেমে, উত্তরাভিমুখ ভিতরদ্বারের প্রবেশস্থানে বসাইলেন, সেইস্থানে অন্তর্জ্বালাজনক অন্তর্জ্বালার প্রতিমা স্থাপিত ছিল।
৮।৪ - আর দেখ, প্রান্তরে যে দৃশ্য আমি দেখিয়াছিলাম, সে স্থানে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সেইরূপ প্রতাপ রহিয়াছে।
ওপরের উদ্ধৃতি থেকে ইজেকিয়েলের বর্ণনাভঙ্গির আরো কিছু নিদর্শন পাওয়া যাবে। প্রথম দর্শনে স্বাভাবিক ভাবেই ইজেকিয়েল উত্তেজিত হয়েছিলেন, তা সত্ত্বেও তাঁর বিচারবুদ্ধিকে আবেগ এবং মানসিক চাঞ্চল্য থেকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত সরিয়ে রাখতে পেরেছিলেন এবং সেই কারণেই যা দেখেছেন, তার বাস্তব বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু এখন মানসিক অভিঘাতের কারণে তিনি সম্পূর্ণ অভিভূত। যে উড্ডয়নের পরিসমাপ্তি ঘটেছে প্রথম দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে, তার স্মৃতিও বিলুপ্ত। মনের এ বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে ফিরে গেছেন স্বজন-প্রতিবেশীদের মাঝে। তারপর আরো এক হপ্তা লেগেছে মনের সে ভাব কাটিয়ে উঠতে।
মহাকাশযানের আকৃতির ওপর যে বিরাট পরিমাণ মনোযোগ দিয়েছিলেন প্রথম দর্শনের কালে, তার আর পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। তৃতীয় দর্শনের কালে শুধু চাকার কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন, নতুন করে, যথাযথভাবে। কিন্তু প্রত্যেক বারেই তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আগের দেখা মহাকাশযানের সঙ্গে নতুন দেখা যানের অভিন্নতার কথা।
প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বিতীয় দর্শনের কোন গুরুত্ব নেই তৃতীয় দর্শনের কালে অবশ্য রহস্যময় একটি অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। যে রহস্য, সে উৎকণ্ঠার কারণ মনে হয়, সর্বতোভাবে মহাকাশযানের কারণে। ঘটনার স্থানটিও বিশেষ ণ্ডরুত্বপূর্ণ, কেননা যে মন্দিরে সে ঘটনা ঘটেছে, বাইবেলে কথিত মত, সে মন্দির সলোমনের মন্দির নয়।
অধিনায়ক ইজেকিয়েলকে বিমানে করে নিয়ে গেছেন। সে বিমান নেবেছে, মন্দিরের ভেতরের প্রাঙ্গণে। নাবার সঙ্গে সঙ্গে অধিনায়ক তলব করেছেন, বিমানাঙ্গনের এক কর্মচারীকে। সাতজন লোক বেরিয়ে এসেছে একটা দরজা দিয়ে, দাঁড়িয়েছে অধিনায়কের সামনে। তাঁর আদেশ গ্রহণ করেছে, তারপরেই করেছে অন্তর্ধান।
ইজেকিয়েলকে নিয়ে অধিনায়ক দাঁড়িয়ে আছেন মন্দির প্রাঙ্গণে, এমনসময় একটি লোক ফিরে এসে সৈনিকের ভঙ্গিতে বললে, আপনার আদেশমত কাজ করেছি। সে লোকটির পরিধেয় অন্যান্যদের থেকে পৃথক। তার পোষাক সুতীর বলে মনে হল, কিন্তু পরমুহুর্তে মনে হল, সে-পোষাক নিরাপত্তামূলক। লোকগুলির হাতে এমন সব যন্ত্রপাতি, যাদের সঙ্গে ইজেকিয়েলের কোন পরিচয় নেই চেহারায়, চলনে, বলনে, মানুষ তারা সবাই, ঠিক যেমন-মানুষের সঙ্গে তিনি চিরকাল পরিচিত।
ঘটনার মোড় এখন মহাকাশযানের দিকে, সম্ভবতঃ তারই কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কারাদি সম্পন্ন হচ্ছে। বিমানটিকে নাবানো হয়েছিল হয়তো সেই প্রয়োজনেই। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক লোকটিকে মহাকাশযানের কাছে গিয়ে একটা হেলিকপ্টারের পাশে দাঁড়াতে বললেন। পারমাণবিক শক্তি-উৎপাদক যন্ত্রের গনগনে বিকিরকের কাছ থেকে তার দূরত্বের স্বল্পতা দেখে অনুমান করা যায়, তার নিরাপত্তামূলক পোষাকের প্রয়োজনীয়তা।
This idea has become outdated
No doubt. But there is no new idea in place of it.
যানের ভেতর থেকে একটি যান্ত্রিক হস্ত লোহিততপ্ত একটি যন্ত্রাংশ বের করে নিরাপত্তা পোষাক পরিহিত লোকটির হাতে দিতে সে তৎক্ষণাৎ চলে গেল।
সব দিক থেকেই মনে হয়, ব্যাপারটা বেশ ঘোরালো গোছের, কারণ অধিনায়ক বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করেছিলেন, অন্ততঃ নিজের জন্যেও। এদিকে দেখি, তাঁর চালক-কোষটিকে নিজের কাছে আনিয়েছেন, দূর-নিয়ন্ত্রণের সাহায্যে, উদ্দ্যেশ্য, হঠাৎ প্রয়োজনে যাতে অবিলম্বে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেন নিরাপদ দূরত্বে, আর একদিকে বুঝতে পারি, আরো একটি মহাকাশযান কাছাকাছি অপেক্ষমান ছিল, প্রয়োজনে সেও তুলে নিয়ে যেতে পারতো অধিনায়ককে।
যাইহোক, পূর্বপ্রস্তুতির সুব্যবস্থার গুণে অঘটন কিছু ঘটেনি। অধিনায়ক তাঁর কোষ নিয়ে মহাকাশযানে ফিরে গেছেন, গিয়েই চালু করেছেন সে যানকে, বহিঃপ্রাঙ্গণে যাবার জন্যে। ইজেকিয়েল তাঁর কাছে নীত হয়েছেন, আদেশও গ্রহণ করেছেন, তারপর দেখেছেন, সে মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ এবং উড্ডয়ন, শেষে দ্বিতীয় যানটি তাঁকে নিয়ে গেছে তাঁর স্বজন-প্রতিবেশীর কাছে। প্রসঙ্গতঃ তাঁর প্রথম উড্ডয়নের ধাক্কা ইতিমধ্যে সামলে উঠেছেন এবং দ্বিতীয় উড্ডয়ন তাঁকে দিয়েছে বিস্ময়কর উপভোগ্য অভিজ্ঞতা।
তারপর প্রায় উনিশ বছর কেটে গেছে। এই দীর্ঘকালের ভেতর ইজেকিয়েল আর একবারও কোন মহাকাশযানের কথা উচ্চারণ করেননি।
তারপর হঠাৎ একদিন অধিনায়ক আবার এসে তুলে নিয়ে গেছেন কোন মন্দিরে। সে মন্দির ছিল বহু উচ্চ কোন স্থানে। এই ঘটনা যে পূর্ব-পরিকল্পিত, তা বোঝা যায়, অবতরণক্ষেত্রে ইজেকিয়েলের জন্যে অপেক্ষমান একটি লোককে দেখে। তৃতীয় ঘটনার মত এবারও লোকটির চালচলন, চেহারা, কথাবার্তা, কোন কিছুতেই অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাননি, তাই তার কোন উল্লেখও করেননি। তার পোষাকটা অবশ্য তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার পোষাকের গা যেন ব্রঞ্জের মত বা সোনার মত চকচকে, সেই প্রথম দর্শনের দিনে দেখা অধিনায়েকর পরিধেয়ের মত, যার ঔজ্জ্বল্যের বর্ণনায় বলেছিলেন, অগ্নিশিখার মত।
অপেক্ষমান লোকটির হাতে দুটি বস্তু, যার একটিকে মনে হয়েছে শনের দড়ি, আর একটিকে মাপকাঠি। লোকটি বারে-বারে ইজেকিয়েলকে বলেছে যে তাঁকে সেখানে আনা হয়েছে সব দেখাবার জন্যে, বলেছে তাঁকে যা দেখানো হবে, তা যেন তিনি খুব ভালো করে মনে রাখেন।
ইজেকিয়েলকে সে নিয়ে চললো মন্দিরের বিশাল প্রাঙ্গণের ভেতর দিয়ে। তার নিখুঁত বর্ণনা রেখে গেছেন তিনি। খানিক পরে, যে বিমানে তিনি এসেছিলেন, সে-বিমান মন্দিরের সামনের অবতরণক্ষেত্র থেকে উড়ে গিয়ে ভেতরের প্রাঙ্গণে নাবলো। তাঁর প্রদর্শক এবং রক্ষী লোকটি তাঁকেও সেখানে নিয়ে গেল। তারপর, যতক্ষণ অধিনায়ক তাঁকে করণীয় নির্দেশাদি দিয়েহেন, ততক্ষণ সে লোকটিও তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছে।
এইখানে পৌছে ইজেকিয়েলের প্রতিবেদন হঠাৎ থেমে গেছে, তাই আমাদের দুর্ভাগ্য, সেই শেষ সাক্ষাতের পরিণতি, তথা তাঁর প্রতিবেদনের পরিশিষ্টের পরিচয় আর মেলে না।
এ সংক্ষিপ্তসারে তাঁর প্রতিবেদনে উল্লখিত অপ্রয়োজনীয়, অংশসমূহ বাদ দিয়েছি, প্রকৃত প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহের উপস্থাপনার উদ্দেশ্যে। সেই কারণে যে সব অংশে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যখ্যার কোন আলোচনা নেই, ভবিষ্যদ্বাণী সংক্রান্ত সে সব অংশসমূহকে আমার এ আলোচনার বাইরে রেখে দিয়েছি। ফলে প্রযুক্তিগত তথ্যাদি আরো পরিষ্কার হয়েছে- ফুটে উঠেছে ঘটনাপুঞ্জের সারাংশ এবং তাদের যুক্তিসঙ্গত যোগাযোগ।
এবার অবশ্য, উপস্থাপনার সে ধারা অনুসরণ না করে সমস্ত খুঁটিনাটির দিকেই চোখ ফেরাবো। সে খুঁটিনাটি প্রমাণ করবে ইজেকিয়েলের প্রতিবেদনের সত্যতাকে, পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং বিচার-বিবেচনা মারফত।
মহাকাশযান
ইজেকিয়েলের মহাকাশযান দর্শনের প্রমাণ পেতে হলে, তাঁর পর্যবেক্ষণের যাথাযথ্য বুঝতে হলে, আসল মহাকাশযানের সঙ্গে যথেষ্ট পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। তাই, এ পরিচ্ছেদে তার প্রতিটি অংশের বর্ণনা দেবো। এ বর্ণনা-, বিচার-বিশ্লেষণের পরিণতির ওপর পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত। এ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছি প্রযুক্তিগত তথ্যে কৌতূহলী পাঠকদের জন্যে, আর যন্ত্র-বিজ্ঞানীদের প্রয়োজনে তথ্যাদি সন্নিবিষ্ট করেছি, এ বইয়ের পরিশিষ্টে, অনুমান এবং সিদ্ধান্ত সমেত মৌলিক তথ্য।
পরিষ্কার করে বোঝবার জন্যে মহাকাশযানের গঠন এবং তার ক্রিয়াপদ্ধতি সম্পর্কে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করবো।
গঠন
মহাকাশযানের গঠনতন্ত্রে আছে প্রধানতঃ তিনটি অংশ,-
কেন্দ্রীয় মূল দেহকাণ্ড,
দেহকান্ডের আলম্বস্বরূপ চারটে হেলিকপ্টার, আর
চালকের নিয়ন্ত্রক-কোষ, যার স্থান মূল দেহকাণ্ডের ওপর দিকে। ১নং, ২নং এবং
৪নং ছবিতে মহাকাশযানের সাধারণ বাহ্যিক রূপ চিত্রিত হয়েছে।
মূল দেহকাণ্ড
চেহারাটা ভবিষ্যৎ উড্ডয়নযানের না হয়ে, বলা যায়, ছেলেদের খেলবার লাট্টুর মতন। তা হোক, একটু পরেই বুঝতে পারা যাবে, অবয়ব রূপায়ণের পরিকল্পনাটি যথেষ্ট বিচক্ষণ এবং দক্ষতাপূর্ণ।
(http://i57.tinypic.com/2qas091.jpg)
এ ধরনের চেহারার প্রথম কারণ, বায়ুগতীয় প্রয়োজনীয়তা। মহাকাশ থেকে বাতাস চিরে পৃথিবীমুখী যাত্রা যে-গতিবেগ দিয়ে শুরু হয়, তার মান ঘন্টায় প্রায় ২১,৩০০ মাইল। পৃথিবীতে নাববার সময় সেই প্রচণ্ড বেগকে কমিয়ে শুন্যে নাবাতে হবে। গতিরোধের একটা বড় অংশ সাধিত হবে, তার অবয়বে যদি বায়ুগতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুব বেশি থাকে। এই কারণে মহাকাশযানের নিম্নভাগের আধা শাঙ্কব (quasi-conical), গঠন খুবই উপযুক্ত। অবতরণ-কালে যানের তলদেশের অগ্রভাগ থাকবে উড্ডয়নগতিমুখী। তার সূক্ষ্ম 'আক্রম কোণের' (angle of attack = বিমানের ডানার জ্যা এবং বায়ুর আপেক্ষিক প্রবাহপথের অন্তর্গত সূক্ষ্ম কোণ) কথা ছাড়া, মহাকাশযান নিচের দিকে উড়ে আসবে তার প্রধান উল্লম্ব-অক্ষ বরাবর (৪ নং ছবি)। ওপরে ওঠবার সময় কিন্তু তার উল্টোটাই ঘটে। মহাকাশযান উড়ে চলে তার প্রধান উল্লম্ব-অক্ষ বরাবর ঊর্ধ্বমুখে, আসন্ন প্রবাহের দিকে ফেরানো থাকে তার মূল দেহকাণ্ড। অবতরণকালেও তেমনি প্রয়োজন হৃয়, সে-প্রতিরোধের সম্ভাব্য ন্যূনতা। যানের উর্ধ্বাংশের বায়ুগতীয় প্রতিরোধ নির্ণীত হয় তার গোলাকৃতি প্রাম্ভভাগ থেকে। কেন্দ্রের কাছাকাছি তার যে বাহ্যিক গঠন তার গুরুত্ব সামান্যই। নিম্নাংশের অবতল গঠনের জন্যেও চেপ্টা, খাড়া কানার চেয়ে সুগোল, নিটোল কানা-ই বেশি উপযুক্ত। তাই, কি উর্ধ্বাংশের, কি নিম্নাংশের বহিরাবরণের গঠনের দিক থেকে, তাদের প্রয়োজনটা একইরকম। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের বায়ুগতীয় অবয়বের ভেতর তাই সহজেই সামঞ্জস্য রাখা যায়।
বাহ্যিক গঠনের ক্ষেত্রে নিম্নাংশের এই আধা-শাঙ্কব অবয়ব সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন নাসার ল্যাংলী রিসার্চ সেন্টারের রজার এ আণ্ডার্সন, এবং তাঁর গবেষণার ফল প্রকাশ করেছিলেন, ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে। এই ধরনের বাহ্যিক গঠনের আবিষ্কারের মূলে ছিল উচ্চ বায়ুগতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে কাঠামোকে লঘুভার করার প্রয়াস। দুটো প্রয়োজনই মিটেছে চমৎকারভাবে। লঘুভার কাঠামোর জনো অবতল গঠন তৈরী, নিঃসন্দেহে সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান। কারণ এ ধরনের গঠনে ওপরকার কাঠামোয় শুধু সংকোচন ও প্রসারজনিত চাপ পড়বে ফলে অল্প কিছু দৃঢ় আস্তর দিয়ে ধাতুর পাতলা পাত লাগিয়েই কাজ চালানো যাবে।
এই ধরনের গঠনের সত্যিকার উপযুক্ততা উপলব্ধি করা যাবে, যে-যানের কথা আমরা আলোচনা করছি, বিশেষ করে তারই ক্ষেত্রে। বাতাবরণের ভেতর ওড়বার সময় মহাকাশযানের চারটে হেলিকপ্টার দরকার হয়। এর জন্যে যানের অবতল গঠনই আদর্শ, কারণ হেলিকপ্টারগুলোকে তাহলে স্থাপন করা যাবে গরিষ্ঠতম দূরত্বে। সুষ্ঠ উড্ডয়নের পক্ষে তার গুরুত্ব অতান্ত বেশি। অবতল কাঠামোর আরো সুবিধে এই যে তার খিলেনের তলায় পাখাগুলোকে জোড করে ওপরের দিকে মুড়ে রাখাও যাবে। এ বিন্যাসে মূল দেহকাণ্ড থাকবে হেলিকপ্টারগুলোর মাঝখানে। গোটা যানের
উচ্চতাকে এ ব্যবস্থায় রাখা যাবে ন্যূনকল্পে, ভরকেন্দ্র থাকবে যতদূর সম্ভব নিচে আর পৃথিবী মুখী উড্ডয়নেও তা দেবে প্রয়োজনীয় স্থৈর্য এবং অবতরণ বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে মহাকাশযানের বহিরঙ্গের এমন আর কোনরকম গঠন-বিন্যাসের কথা জানি না, যা প্রচালন এবং গঠনপ্রণালীর নানাতরো বিরুদ্ধ-ব্যবস্থার মাঝে সমন্বয় সাধন করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে, মার্কারী, জেমিনি এবং অ্যাপোলোযানের সুপরিচিত অবয়বের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। তাদের গঠন-বিন্যাসে হেলিকপ্টারের অন্তর্ভুক্তি অসম্ভব।
ইজেকিয়েল বর্ণিত মহাকাশযানের উদ্দেশ্য থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, সেই অজ্ঞাতকুলশীল যন্ত্রবিদ্দের হাতে যে-ধরনের প্রযুক্তি ছিল এবং যানের যে-চেহারা তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন, তা নিঃসন্দেহে সেই উদ্দেশ্য সাধনের সহায়ক। এই কারণেই আমি বলেছি যে ইজেকিয়েলের প্রতিবেদনের বাস্তব প্রযুক্তিগত ব্যখ্যা নির্ভর করছে, অ্যাণ্ডার্সনের নিবন্ধের ওপর।
যানের বহিরঙ্গের বর্ণনা দিয়েছি এবার তার যস্ত্রপাতির কথা বলবো। প্রধান যন্ত্রগুলোর ভেতর আছে রকেট-ইঞ্জিন- (তাতে আছে, পারমাণবিক শক্তি-উৎপাদক-যন্ত্র, প্লাগনজ্ল এবং বিকিরক),ইন্ধনাধার,ইন্ধন, হেলিকপ্টারের প্রয়োজনে শক্তি-উৎপাদক যন্ত্র এবং আরো কিছু বাড়তি যন্ত্র, যথা-পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ-তন্ত্র এবং ইন্ধন ' পুনর্তরলীকরণ যন্ত্র।
নিম্নাঙ্গের গঠনকৌশল যেমন আমাদের পুনর্গঠনের চাবিকাঠি, গোটা অবয়বের ক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তি-উৎপাদক যন্ত্রটিও তেমনি চাবিকাঠি। মূল দেহকাণ্ডের নিম্নতম অংশে স্থাপিত সে-যন্ত্র। এই যস্ত্রটির অভাবেই আমরা আজো অমন যান তৈরী করতে পারছি না।
একথা বুঝতে হলে, রকেটের হিসেব-নিকেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে হবে। সে বৈশিষ্ট্য হলো, আপেক্ষিক ঘাত,' Isp। সাধারণ সংজ্ঞা অনুযায়ী তার মান, প্রতি সেকেণ্ডে প্রতি পাউন্ড জ্বালানি খরচ করে একটা ইঞ্জিন যত পাউণ্ড ঘাত (thrust) সৃষ্টি করতে পারে। তার অর্থ, একটা বিশেষ পরিমাণ ঘাত সৃষ্টি করতে যত কম জুলানি খরচ হবে, Isp মান তত বেশি হবে। তাহলে, মোটামুটিভাবে বলা যায়, আপেক্ষিক ঘাত' হচ্ছে, চালক-যন্ত্রের দক্ষতার নির্দেশ। অপরপক্ষে, জ্বালানির ওজনটাই মোট ওজনের বৃহত্তম অংশ, তাই জ্বালানির ওজন কমানোর ব্যাপারটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সহজ কথায়, এইটাই হল, 'আপেক্ষিক ঘাতের' মর্মার্থ।
এমন হতে পারে, কোন একটা উড্ডয়ন-পরিকল্পনায় একটি বিশেষ 'আপেক্ষিক ঘাত' এমন ওজন এবং আয়তনে পরিণত হচ্ছে যে তাদের সমাধান কোনভাবেই সম্ভব নয়। তেমন ক্ষেত্রে উচ্চতর 'আপেক্ষিক ঘাত' ব্যবহার করা যায়, এমন কোন ব্যবস্থা করতে হবে। ইজেকিয়েলের মহাকাশযানের ব্যাপারে আমরা ঠিক এইসমস্যার সামনে পড়ি।
উচ্চ দহন-তাপ সৃষ্টির প্রয়োজনে আজকের চালকযন্ত্রে ব্যবহৃত হয়, জ্বালানির সঙ্গে বিশুদ্ধ অক্সিজেন, - হয় অনা কোন দাহক। যে ধরনের জ্বালানি আমরা ব্যবহার করি, তাতে আজকের যন্ত্র ৪০০ (চারশ') সেকেণ্ড পর্যন্ত এবং তদূর্ধ্ব Isp মানে পোঁছতে পারে। (সহজ সংজ্ঞা অনুযায়ী 'সেকেন্ড' পাওয়া যায় Isp এর সংজ্ঞা মতে, পাউণ্ডকে
'প্রতি পাউন্ড/সেকেন্ড দিয়ে ভাগ করে। পারমাণবিক শক্তি-উৎপাদক যন্ত্রের ব্যবহারে, তার উচ্চ তাপের কারণে এই মান- পৌঁছে যায় ৯০০ সেকেন্ডের উর্ধে। এ গ্রন্থের পরিশিষ্টে দেথিয়েছি যে ইজেকিয়েলের দেখা মহাকাশযান তখন-ই সম্ভব, যখন Isp মান ২০০০ সেকেণ্ড বা তারও ওপরে পৌঁছয়। ওই জন্যই অর্থাৎ Isp মানের স্বল্পতার কারণেই ওরকম মহাকাশযান এখন তৈরী করা যায় না। Isp এর অমন উচ্চ মানের পাশে আজকের লব্ধ্ মানকে পারাবারের পাশ পল্বল বললে অতুক্তি হবে না। তবু অতখানি হতাশ হবার কারণ নেই, ব্যবধানটা সতিই অত দুস্তর নয়, বরং বলতে পারি, কয়েক দশকের ভেতরেই অমন চালকযন্ত্র তৈরী করা সম্ভব হবে। অমন একটা যস্ত্র তৈরী করতে সময কতটা লাগবে, তা নির্ভর করে বর্তমান বিরাট প্রযুক্তিগত- প্রতিবন্ধক অপনয়নের ওপর। তবে সে-প্রতিবন্ধ দূর করতে যে টাকা খরচ হবে, তার অঙ্কও আকাশ-ছোওয়া। তবু সেই উন্নত মানে পৌছবার কাল নির্ধারিত হবে, চেষ্টার ব্যাপকতা এবং দৃঢ়তার ওপর। সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলা যায়, অমন যন্ত্র ইতিমধ্যেই তৈরী হয়ে যেতে পারতা, যদি তার প্রয়োজনীয়তাকে এবান্তভাবে উপলব্ধি করে কয়েক বছর আগে থেকেই তাব উন্নতিবিধানের চেষ্টা করা হত।
মহাকাশযানের পারমানবিক শক্তি-উৎপাদক যন্ত্র আজ আর এমন কিছু কল্পনার বৃত্তান্ত নয়, নয় দুর ভবিষ্যতের বস্তু। বাস্তবিক পক্ষে, সে বস্তু আজ আমাদের হাতের নাগাল,-সময়ের পরিপ্রেক্ষিতেই হাতের নাগাল,। তবু নিছক প্রযুক্তির দিক থেকে দেখতে গেলে, আকাঙ্ক্ষিত বস্ত কিন্তু হনৌজ দূর অস্ত।
আমাদের বর্তমান জ্ঞানের সঙ্গে সেই 'ভিনদেশী' প্রযুক্তি বিদ্যার তুলনার উদ্দেশ্য, ইজেকিয়েলের পর্যবেক্ষণের প্রকৃত মূল্যায়ন। এ চিন্তা, এ তুলনা, বাইবেলের মহাকাশযানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে করবে নিকটতর। সে প্রযুক্তির সান্নিধ্য, আমাদের মূল্যায়নে, আমাদের আপন প্রযুক্তির ভিত্তিভুমিকে করবে সুদৃঢ়।
একালের প্রযুক্তির একটি বিকাশ আমরা দেথেছি মহাকাশযানের নিম্নাংশের রূপায়ণের মাধামে। উপাদান সস্পর্কে অতি সাম্প্রতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা-অনুশীলনের উন্নতিতে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ়তর হয় যে ভবিযাৎ পরিকল্পনায় বহুল পরিমান ওজন কমাবার ব্যবস্থা হবে এবং বিভিন্ন হিসেব-নিকেশেও তা ধরা হবে। তাই ১নং এবং ৪নং ছবিতে যে মহাকাশযানের রূপ দেখান হয়েছে, সে মহাকাশযানের সম্ভাব্যতার কথা আজ আমরা চিন্তা করতে পারি, কেননা অমন একটা মহাকাশযান আমরা এথনই গডে ফেলতে পারি, অবশ্য পারমাণবিক শক্তি-উৎপাদক যন্ত্রটিকে বাদ দিয়ে। এ কথা সত্যি যে সে-নির্মাণ-পরিকল্পনায় এখানে ওখানে কিছু অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হতে হবেই। যথোচিত উন্নতিবিধানের জন্যে পরিকল্পনাও করতে হবে এবং সে পরিকল্পনাকে কাজেও লাগাতে হবে। কিন্তু এসব ব্যাপার তো আমাদের কাছে নতুন নয়, যাঁরা মহাকাশযান বা উচ্চ গতিসম্পন্ন বিমানের উন্নতিবিধানের কাজ করেছেন, তাঁরাই এ ঘটনার সঙ্গে পরিচিত।