মনসামাফিয়া কাব্য লেখারই ইচ্ছা ছিল প্রথম দিকে। কিন্তু অনেক ভেবেচিন্তেও মাফিয়া নিয়ে কাব্য লেখার সাহস পেলাম না। পরে যদি কোনোদিন কোনো অলৌকিক উপায়ে সাহস এবং ছন্দ পেয়ে যাই তখন অবশ্যই লিখে ফেলব। যদিও সেদিন পাঠকদের অবস্থার কথা চিন্তা করে আগে থেকেই দুঃখ প্রকাশ করে রাখলাম।
মনসা দেবীর জন্ম নিয়ে অনেক রকমের কাহিনী আছে। কিন্তু সেসব নিয়ে গবেষণায় আমরা যেতে চাই না। আমাদের উদ্দেশ্য হল একখানা জমজমাট সাসপেন্সে ভরা আধুনিক মাফিয়া সিনেমার গল্প। সেখানে ঠিক ক্লাইম্যাক্স মত চরিত্রদের ইতিহাস বের হয়ে আসবে। আপাতত মনসা দেবীর যেটুকু মনে আছে তা হল তিনি জ্ঞান হয়ে অবধি নিজেকে একদল অপদেবতার মধ্যেই থাকতে দেখেছেন। বেচারীরা দেবতাদের অনেক রকম গুণের অধীকারী হলেও সমাজে অচ্ছুৎ। দেব সমাজে এখনও সাম্যের তত্ব কলকে পায় না। ফলে একদিকে দেবতারা স্বর্গে মাল খেয়ে ফূর্তি করেন অন্যদিকে মনসা এবং তাঁর সমাজের অপদেবতাদের কেউ খবর রাখে না। এর মধ্যে মনসা একদিন এক দেবতার সঙ্গে ঝামেলায় জড়ালেন। বেদম লড়াইয়ে তাঁর একখানা চোখ নষ্ট হয়ে গেল। তার পর থেকে দেবতাদের উপর তাঁর রাগ কোনো থার্মোমিটারের মাপে কুলোয় না। "বলতে পারো, বড়মানুষ মোটর কেন চড়বে???" কবি সুকান্তের মতই তিনি জনে জনে প্রশ্ন করেন।
উত্তর যা পেলেন তা খুব পেঁচালো। দেবতারা হল রুলিং পার্টি। মানুষ নিজে খেতে পাক না পাক নিয়মিত ওদেরকে ট্যাক্স যোগায়। সেই দিয়েই ওদের এত র্যালা। স্বর্গের এসি হলঘরে বসে তারা মাল খেতে খেতে আর নাচগানা দেখতে দেখতে জগতের মঙ্গলচিন্তা করে।
সবকিছু বুঝে নিয়ে জার্মানীর মতই মনসা হুঙ্কার দিলেন "বাঁচবার জায়গা চাই"। আমরাও পাব্লিকের কান মলে আদায় করব। আমরাও সম্মানিত ভদ্রলোক হব।
সখীরা মনসাকে থামাতে চাইল। দেবতাদের অনেক ক্ষমতা, তারা উপরে বসেই তুড়ি দিয়ে ভুড়ি ফাঁসাতে পারে বলেই না লোকে ওদের এত ভয় করে! নিজেরা খেতে না পেলেও পুজো দেয়!
মনসা বললেন, আমরাও ভুড়ি ফাঁসিয়ে দেবো। তুড়ি দিয়ে না পারি তো কি হয়েছে? ছুরি দিয়েই ফাঁসাবো। ঋষি বলেছেন যত মত তত পথ।
এছাড়া পৃথিবীতে দেবতাদের অনেক দালাল থাকে।
আমরাও দালাল লাগাবো।
সেজন্য অনেক খরচ আছে। দালাল তো ফ্রি কাজ করবে না।
খরচ লাগলে দিতে হবে। পরে তো রিটার্ন পাওয়া যাবে।
কোথা থেকে আসবে সেই খরচ?
সখিরে! একটা বড়লোকের সন্ধান করে দে। কান মলে কিছু আদায় করি। সেই থেকেই বাকি সব হবে।
দুনিয়ার সবচে বড়লোক এখন চাঁদ সওদাগর। কিন্তু সে ব্যাটা শিবের চেলা। আমাদের তোলা দেবেই না। চাইলে হয়ত কেস খেতে হবে।
আরে বাবা! মার্কেটে নাম কামাতে গেলে বড় কিছু করতেই হবে। এই চাঁদ ব্যাটার কাছে তোলা আদায় করতে পারলে বাকিরা সবাই ভয়ে চমকে যাবে। একে দিয়েই শুরু করি। চল, ব্যাটাকে ফোন লাগা। বলবি মাসে মাসে পুজো চাই। নাহলে বিজনেসের বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দেব। কোনো বাপ বাঁচাতে পারবে না।