বাংলার সোনার ছেলে অধ্যাপক গোলাম আজম আজ বিরোধীদের অপপ্রচারের ফলে প্রতিনিয়ত যেখানে সেখানে অপমানিত হচ্ছেন। সোনার বাংলায় মানুষ যাতে নিজের অধিকার নিয়ে শান্তিতে বসবাস ও দিনে দিনে উন্নতি করতে পারে সেজন্য তিনি যে প্রাণপণ প্রচেষ্টা করেছিলেন তার প্রায় সবটাই আজ ভুলে যেতে বসেছে সাধারণ মানুষ। একমাত্র গোলাম আজম এর অতিনিকট কয়েকজন ছাড়া সেসব কথা কেউ জানেও না, এতটাই তিনি নিজের প্রচার অপছন্দ করেন। সেই সুযোগ নিয়েই লাগাতার বিরুদ্ধ প্রচারের ফলে আজ তিনি খলনায়ক। আসুন, আজ দেশের প্রতি তাঁর অবদান কি ছিক তা আপনাদের জানাই। অবিশ্বাসীরা এবং বিরোধী প্রচারে বিভ্রান্ত লোকেরা গালাগালি দিয়ে যাবেই, তাতে কান দিয়ে সত্যকে চেপে রাখার প্রয়োজন দেখি না।
মহামান্য আজম ছিলেন শান্তির উপাসক। ৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় যে শান্তির উপাসকেরা শান্তিতে থাকার জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে বাধ্য হয়েছিল, সেই শান্তির দ্বারা, শান্তির জন্য, শান্ত মানুষের সরকারের তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ সেবক। এছাড়াও তাঁর মধ্যে একাধিক মহান চরিত্রের গুণাবলীর উপযুক্ত মিশ্রন হয়েছিল। যাদের মধ্যে নাম করা যেতে পারে গান্ধীজী ও নেতাজীর। গান্ধীজী ছিলেন চরম ভাবে অহিংশ। তাঁর মতে কেউ যদি এক গালে চড় দেয় তবে অন্য গাল বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আবার নেতাজী ছিলেন তার উলটো, কেউ এক চড় মারব বললে তিনি দুই চড় মেরে দেবার পক্ষে ছিলেন। এর কোনোটাই পুরোপুরি সঠিক মনে না হওয়ায় গোলাম আজম এই দুই চরম নীতির মধ্যে সুন্দর এক ব্যালান্স এনেছিলেন। তিনি বাঙালীকে বলেছিলেন পাকিরা তোমার এক গালে চড় দিলে অন্য গাল বাড়িয়ে দেবে। আর পাকিদের বলেছিলেন বাঙালী এক চড় দেব বললেই তার গালে দুই চড় দিতে। আফসুস, এমন বিরল প্রতিভাকে বাঙালি কোনোদিনই সম্মান দিল না।
ষড়যন্ত্রকারীদের সফল চেষ্টায় বাংলা ভাষা ও রাষ্ট্রীয় একতা যেদিন পরষ্পরের বিরুদ্ধে হয়ে গেল, সেদিন গোলাম আজম এই দুটির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার জন্য যা করেছিলেন তার চেয়ে বেশি কেউ করতেই পারত না। তিনি একদিকে বাংলা ভাষার দাবীতে লিফলেট বিলি করেছেন, আবার অন্যদিকে পাকিদের কাছে সেজন্য ভুল স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশও করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন ভাষার ভিত্তিতে যেন দেশের একতায় ফাটল না ধরে। শান্তির মাঝে যেন অশান্তি না হয়। তাই যখন বাঙালী কাঠভুদাইয়ের মতন বলে বসল যে ইংরাজী শিখব তবু উর্দু শিখব না সেদিনও তিনি মাথা গরম করেন নি। তিনি চেষ্টা করেছিলেন বাঙালী যেন উর্দু হরফে বাংলা লেখার অধিকার পায়। সকলে হয়তো জানেন না যে কলকাতায় প্রথম বাংলা বই ছাপা হয়েছিল রোমান হরফে। আজও ফেসবুক এ অনেকেই সেভাবে বাংলা লেখে। কিন্তু সেদিন রাজনীতির শয়তানেরা তাঁর এই সুন্দর প্রস্তাব নর্দমায় ফেলে দিয়ে দেশকে এক অনিবার্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে ফেলেছিল। তাতেও তিনি দেশের সেবায় বিন্দুমাত্র গাফিলতি দেখান নি।
গৃহযুদ্ধ যখন শুরু হল তিনি একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকের মতই দেশের অখন্ডতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এক ভাষা, এক ধর্ম নিয়ে রাষ্ট্র। কিন্তু বাংলার পক্ষে জনমত বেশি হবার পরেও পাকিস্তানে বাংলা চালু করা সম্ভব নয় বুঝেই তিনি সেই চেষ্টা করেন নি। গান্ধীজী যেমন বলেছিলেন দেশ বিভক্ত হলে তা হবে আমার মৃতদেহের উপর, তিনিও একই কথা বলেছিলেন। গান্ধীজী আজ সারা দুনিয়ায় একজন সম্মানিত দেশপ্রেমিক। এদিকে আমরা গোলাম আজমের বিন্দুমাত্র সম্মান দিই না। অথচ তাঁর মধ্যে শুধু গান্ধীজী নয়, তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, ভগত সিং, বাঘা যতীন থেকে শুরু করে সমস্ত সম্মানিত সংগ্রামীর গুণের সমাবেশ ছিল। তাঁরা লড়াই করেছিলেন বিদেশী ফাসাদ সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে, আর গোলাম আজম লড়াই করেছিলেন দেশী ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে। মূল উদ্দেশ্য কিন্তু একই ছিল। ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের নির্মূল করে দেশের উন্নতি করা। শান্তির বিজয় প্রতিষ্ঠা করা।
অবশেষে যখন তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিদেশীর সাহায্য নিয়ে দেশকে ভাগ করে ফেলল তখনো তিনি তাঁর কর্তব্য ভোলেন নি। যে প্রেম তাঁর অখন্ড পাকিস্তানের প্রতি ছিল তা কোনো সরকারের প্রতি ভালবাসা নয়। তা ছিল শান্তির প্রতি তাঁর ভালবাসা। সেই শান্তির সুর আজও তাঁর হৃদয়ে নিয়ে তিনি বাঙালীর উন্নতির জন্য অবিরল চেষ্টা করে চলেছেন। যখনই সুযোগ পেয়েছেন দেশে শান্তি ফেরানোর জন্য সাধ্যের অতিরিক্ত চেষ্টা করেছেন। দুঃখের কথা হল তাঁর শত্রুরা তাঁর সমস্ত ভাল কাজকে খারাপ দেখানোর চেষ্টায় সফল। তাই বিভ্রান্ত জনতা এমনকি তাঁকে জুতোপেটা অবধি করেছে। কিন্তু এর পরেও তিনি বাংলার শান্তি আর উন্নতির চেষ্টা ছেড়ে দেন নি। জানিনা তিনি কোনোদিন সফল হবেন কিনা। তবু তাঁর এই মহান প্রচেষ্টার প্রতি শুভেচ্ছা জানাই। সেই সাথে তাঁর এই প্রচেষ্টায় যাঁরা সাথে আছেন এবং যাঁরা তাঁর সাথে কাজ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন তাঁদেরও জন্য শুভেচ্ছা আর সম্মান রইল। একদিন জাতি তাঁদের অবদান ঠিকই বুঝতে পারবে। সত্য কোনোদিন কেউ চিরকাল চেপে রাখতে পারে না।
কাদের মোল্লার ফাঁসির আনন্দে গলা অবধি গিলে যে মানবাধিকার বিরোধী কাজ করেছিলাম তাতে আজ পেটের মইদ্যে গজব সৃষ্টি হয়েছে। সেই গজবের ধাক্কায় আজ চক্ষু পরিষ্কার, দিলের মোহর অপনীত। তাই এইবার ছাগুদের জন্য কাঁটালপাতা বিতরন করে যথাসাধ্য আদর্শ মানবতার উদাহরণ রাখলাম।