তাল্গাচ, নাস্তিক ও মামদো ভূত

Started by Jupiter Joyprakash, May 03, 2013, 05:14:01 PM

Previous topic - Next topic

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Jupiter Joyprakash

তাল্গাচ, নাস্তিক ও মামদো ভূত


প্রচন্ড রৌদ্রে পথ চলিতে চলিতে একদা এক পথিক পথের প্রান্তে একটি তাল্গাচ দেখিতে পাইল। তাল্গাচের সুশীতল ছায়া বড়ই লোভনীয় দেখিয়া সে তাল্গাচের তলায় বসিয়া পড়িল।তাল্গাচের মাথায় ছিল মামদো ভুত। সে শীতল শীতল ফুঁ মারিয়া পথিককে ঘুম পাড়াইয়া দিল। তাহার পর পথিকের মাথা হইতে বুদ্ধিটুকু চুশিয়া লইল।পথিকের যখন ঘুম ভাঙিল তখন সে তাড়াতাড়ি উঠিতে গেল। অমনি মামদো ভুত তাহার লম্বা ঠ্যাং ঝুলাইয়া তাহার মাথায় চাপাইয়া তাহাকে আবার বসাইয়া দিল।
মামদো বলিক, ওহে বে-আদব! তাল্গাচ কি তোমার বাপের সম্পত্তি? যখন খুশি আসিয়া ঘুমাইবে, আর যখন খুশি চলিয়া যাইবে? তাল্গাচ আমার। আমার তাল্গাচের তলায় বসিয়া বাতাস খাইয়াছ, আর তুমি তাল্গাচের সুশীতল ছায়া ত্যাগ করিতে পারিবে না। তাল্গাচের ছায়া হইতে বাহির হইলেই তোমার ঘাড় মটকাইয়া মারিব।
পথিক বড় বিপদে পড়িল। তাল্গাচের সুশীতল ছায়া বড় ভাল, কিন্তু তাহার তলায় থাকিতে গেলে দুনিয়ার সব কাজ বন্ধ করিতে হয়। তাই বাধ্য হইয়া পথিক তাল্গাচ তুলিয়া মাথায় লইল। মাথায় তাল্গাচ লইয়া সে ঘুরিয়া বেড়ায়, আর মামদো ভুতও সাথে সাথেই ঘোরে। ক্রমে ক্রমে তাল্গাচ সেই পথিকের মাথায় শিকড় চালাইয়া দিল। পথিক যেখানেই যায় সকলেই তাহাকে দেখিতে আসে। মামদো ভূতের হুকুম মতন পথিক তাহাদের কাছে তাল্গাচের অসীম গুণের পরিচয় দেয়। সকলেই তাল্গাচের সুশীতল ছায়াতলে আসিয়া জড়ো হয়। শিশু পোলাপান নিজের নাম কি জানিবার আগেই তাল্গাচের গুণাবলী জানিয়া যায়।
মামদো ভুতের ভারি মজা। লোকে তাল্গাচের সুশীতল ছায়ায় আসিয়া বসে, আর তাল্গাচ মাথায় নিয়া বাড়ি যায়। মাথায় একটি তাল্গাচ থাকা যে কত দরকার তাহা জানিতে কেহ আর বাকি নাই। সকলেই জানে যে মাতায় তাল্গাচ না থাকিলে জেবন ব্রেথা হইয়া যায়।

বহুদিন এমন চলার পরে একদিন এক নাস্তিক সেইখানে আসিয়া হাজির হইল। কারবার দেখিয়া তো মাথা খারাপ! ছেলেবুড়ো সবাই মাথায় তাল্গাচ লইয়া ঘোরে। একে অন্যের সাথে দেখা হইলে বলে ?তোমার উপর তাল্গাচ এর সুশীতল ছায়া থাকুক?। নাস্তিকের সেখানে কিছু বন্ধু জুটিল। সকলেই তাহাকে বলিল যে মাতায় তাল্গাচ থাকিলে অনেক সুবিধা। সর্বদা সুশীতল ছায়া পাওয়া যায়। কিন্তু সেই ছায়া মাথা হইতে সরিয়া গেলেই মামদো ভূতের হাতে মারা পড়িতে হইবেক।
নাস্তিক বলিল, তাহা কেমনে হয়? অনেকেরই তো মাথায় তাল্গাচের সুশীতল ছায়া পড়িতেছে না। ছায়া পড়িতেছে অনেক দূরে। সেই ছায়ায় অনেকেই আসে যায়। কুত্তারাও আসে যায়। তবে তাহাদের কেউ মরে না কেন?

তাল্গাচিরা বলিল, যাহারা নিজ ইচ্ছায় তাল্গাচ এর সুশীতল ছায়ায় আসে তাহাদের জন্যই এই নিয়ম।

নাস্তিক বলিল, তোমরা কি সকলেই নিজ ইচ্ছায় তাল্গাচ এর সুশীতল ছায়ায় আসিয়াছিলে? তখন তোমাদের বয়স কত ছিল?

সকলেই বলিল তাহাদের মাথায় জ্ঞানবুদ্ধি গজাইয়া উঠিবার আগেই বাপ-মায়ে তাল্গাচ লাগাইয়া দিয়াছে। নিজ জ্ঞানে তাল্গাচ এর সুশীতল ছায়ায় আসিয়াছে এমন লোক খুবই অল্প।

নাস্তিক বলিল, তবে তোমরা নিজ ইচ্ছায় তাল্গাচ এর সুশীতল ছায়ায় আসিলে কিভাবে? তাল্গাচ কাটিয়া ফেল।

তাহারা বলিল, তাল্গাচ না থাকিলে সুশীতল ছায়া থাকিবে না।

নাস্তিক ছাতা খুলিয়া বলিল, এই আধুনিক পদ্ধতি বেশি ভাল। ইহাতে মামদো ভূতের ভয় নাই। তাহার কথায় কিছু লোকে মাতার তাল্গাচ কাটিয়া ফেলিল। বলিল, আহা কি শান্তি।

=========================================

নাস্তিকের দল কিছু বাড়িল, অন্যদের বলিল তোমরাও তাল্গাচ কাটিয়া ফেল। মামদো ভূতে কিছুই করিতে পারিবেক না।
তাহারা বলিল, মামদো ভূতে কিছু না করুক, তাল্গাচ খুব দরকারী জিনিস। ছাতা হইতে তো আর তাল পাওয়া যায় না।
নাস্তিকেরা বলিল, তাল ফলানোর জন্য কি তাল্গাচ মাথায় রাখার দরকার আছে? চিন্তা করিয়া দেখ দেখি! তাহারা বলিল, চিন্তা করিলে মাথা ঘামিয়া যায়। তাল্গাচ এর সুশীতল ছায়ায় থাকিয়া মাথা ঘামাইলে তাল্গাচ এর অপমান হয়।