রঙ্গিলা রসুল (Rangeela Rasool - The playboy prophet)

Started by Jupiter Joyprakash, May 05, 2013, 03:42:10 PM

Previous topic - Next topic

0 Members and 2 Guests are viewing this topic.

Jupiter Joyprakash

মহম্মদ এই নাতিনীর বয়সী বালিকার প্রতি নজর দিলেন কেন? অনেকেরই ধারণা যে আবু-বকর এর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজন ছিল। প্রথমতঃ তো আবু বকর মহম্মদের ধর্মের প্রতি আগেই বিশ্বাস আনিয়াছিলেন এবং তাঁহাকে খোদার রসুল স্বীকার করিয়া লইয়াছিলেন, অর্থাৎ মহম্মদের বাক্যকে তিনি ঈশ্বরের বাক্য মানিতেন। কাজেই এই ধরণের ব্যক্তিগত আত্মীয়তার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। তবুও ধরা যাক, কখনো যদি এই বিশ্বাসের সম্পর্ক দুর্বল হইয়াও পড়িত তবে তাহা মজবুত করিবার সর্বাধিক সভ্য পন্থা এই ছিল যে মহম্মদ আবুবকর এর কন্যাকে নিজ কন্যা করিয়া লইতেন, নিজহস্তে তাহার বিবাহ দিতেন, তাহার বিবাহে যৌতুক প্রদান করিয়া পিতার স্থান গ্রহণ করিতেন। কিন্তু আরববাসীরা এই প্রকার মোটাদাগের সম্পর্ক ব্যতীত আর কোনো ভদ্রসভ্য সম্পর্কের খবর রাখিত না।

"সৈয়দ আমীর আলি" লিখিয়াছেন যে আরবে কোনো নারী কেবল পত্নী সম্পর্ক ব্যতীত কোনো পরপুরুষের নিকট বাস করিতে পারিত না। মহম্মদ তাঁহার রাজনৈতিক প্রয়োজনে বাধ্য হইয়া ধারাবাহিক বিবাহ করিয়াছিলেন। আহা! প্রিয় ভারত!! পবিত্রতার নক্ষত্র ভারত!!! প্রাচীন আর্যদের প্রাচীন সভ্যতার ভারত!!!! ঔরঙ্গজেব এর পৌত্রী সফিউন্নীসাকে দুর্গাদাস আপন কন্যা হিসাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন, গোলেদারীর আসীর শাহজ়াদী, যিনি লুটের মাল হিসাবে আসিয়াছিলেন, তাঁহাকে শিবাজী আপন কন্যা মানিতেন।

তবে ইহাও মনে রাখিতে হইবে যে আয়েশা অতি কোমল ও লঘুশরীর ছিলেন, তাই পালকী তুলিবার সময় তিনি ভিতরে আছেন কিনা তাহা বুঝিতেই পারা যায় নাই। আয়েশা সেখানেই অসহায় বসিয়া রহিলেন। এই বুঝি কেহ লইতে আসিল, এই বুঝি কেহ আসে, এই প্রতীক্ষায় প্রভাত হইয়া গেল, কেহই আসিল না। ভাগ্যক্রমে সাফবান তাহার ঊট লইয়া সেই পথে যাইতেছিল। আয়েশাকে দেখিয়াই সে চিনিতে পারিল এবং কোনো কথাবার্তায় না গিয়া আয়েশার সামনে নিজের ঊট বসাইয়া দিল। আয়েশাও একলাফে তাহাতে চড়িয়া বসিলেন। এইভাবে একরাত্রি পার করিয়া তিনি প্রিয় মহম্মদের সহিত মিলিত হইলেন।

এখন এই অবস্থায় কে কাহার মুখ বন্ধ করিত! নানাপ্রকার কথাবার্তা শুরু হইয়া গেল। ধীরে-ধীরে মহম্মদও আয়েশার প্রতি বিরক্ত হইয়া উঠিলেন। এ অবস্থায় বেচারী আয়েশা আর কোনো উপায় না দেখিয়া আপন পিতা-মাতার নিকট চলিয়া গেলেন। মাতা তাঁহাকে ভুলাইয়া রাখিবার যন্য যত্ন করিতেন, কিন্তু তাহাতে আয়েশার মনের দুঃখকষ্ট দূর হইত না।

Jupiter Joyprakash

এই ঘটনা লইয়া মহম্মদের বন্ধু ও শত্রুদের মধ্যে বহুপ্রকার মতামতের জন্ম হইতে আরম্ভ করিল। মহম্মদের নামে কলঙ্ক লাগিয়াছিল, তাঁহার প্রতাপও পূর্বের ন্যায় রহিল না। অবশেষে তিনি আলি ও ওসমান এর নিকট পরামর্শ প্রার্থনা করিলেন। আলি জানাইলেন এ ব্যাপারে আয়েশার দাসীকে প্রশ্ন করা উচিত। পরামর্শ উপযুক্তই ছিল, কিন্তু তাহার ফল আলীর জন্য মারাত্মক হইয়াছিল। আয়েশা এই স্পর্ধা জীবন ভুলিতে পারেন নাই যে মহম্মদের জামাতা হইয়া আলী কিনা শাশুড়ীর উপর সন্দেহ করে! আলীর সহিত আয়েশার ভয়ানক শত্রুতা জন্মিল।

মহম্মদের কন্যা ফতেমা, মাতা খাদীজার স্মৃতি ফতেমার সহির আলীর বিবাহ হইয়াছিল। একদিকে প্রিয় জামাতা আলী, অন্যদিকে প্রিয় পত্নী আয়েশা। বেচারা মহম্মদ কোন দিকে যাইতেন! গৃহযুদ্ধের বীজ অঙ্কুরিত হইয়া গিয়াছিল। মহম্মদের মৃত্যুর পর ইসলামের ইতিহাস অন্তহীন রক্তপাতের ইতিহাস। খিলাফতের জন্য এই রক্তপাত হইত না যদি সেদিন আলী ও আয়েশার মন নির্মল হইত, যদি তাঁহারা এই শত্রুতা ভুলিয়া যাইতেন।

বহুবিবাহকারীরা অবধান করুন, যেখানে পয়গম্বরের জীবন বিপন্ন হইয়া পড়ে, এমন মহান ব্যক্তিও আপন ভুলের ও কৃতকর্মের ফল ভোগ করিতে বাধ্য হন, সেখানে আপনারা এমন কে যে কর্মফল হইতে নিজেকে সুরক্ষিত বলিয়া মনে করেন? দশরথের গৃহ ধ্বংশ হইয়া গিয়াছিল, মহম্মদের ধর্ম বিনষ্ট হইয়া গেল, কিসের জন্য? কারণ তাঁহারা বৃদ্ধকালে নবযুবতী (কুমারী) বিবাহ করিয়াছিলেন।



মহম্মদ আয়েশার কক্ষে গিয়া তাঁহার পিতামাতার সমক্ষেই তাঁহার নিকট সমস্ত ইতিহাস জানিতে চাহিলেন। সেই সময় আয়েশার পিতামাতা কন্যাকে কহিলেন, "যদি তুই অন্যায় করিয়া থাকিস তবে তওবা কর। আল্লাহ দয়ালু রক্ষাকর্তা। আর যদি তুই নির্দোষ হইয়া থাকিস তবে তাহাই প্রকাশ কর।"



আয়েশা কিছুক্ষণ চুপ থাকিয়া উত্তর করিলেন, "ধৈর্যই আমার উত্তর, পরমাত্মাই আমার সহায়। যদি আমি নিজেকে নির্দোষ বলি তবে কেহ মানিবে না, তওবা করিব কি অপরাধে? পরমাত্মা জানেন আমি নির্দোষ।"



মহম্মদ মনে মনে আয়েশার চাল-চলন জানিতেন। তিনি বিশ্বাস করিয়া লইলেন কিন্তু লোকজনকেও তো বিশ্বাস করাইবার প্রয়োজন ছিল! অবশেষে তিনি নিজের ঐশ্বরিক জ্ঞানের শরণাগত হইলেন। মুখে কাপড় চাপা দিয়া কিছুক্ষণ দৃশ্যতঃ জ্ঞানহীন অবস্থায় পড়িয়া রহিলেন। অতঃপর কপালের ঘাম মুছিতে মুছিতে উঠিয়া ঘোষণা করিলেন- "আয়েশা! আনন্দ করো। আল্লাহ তোমার নির্দোষিতার সাক্ষ্য দিয়াছেন।"

Jupiter Joyprakash

 আয়েশার হারানো সৌভাগ্য ফিরিয়া আসিল, কিন্তু নিন্দাকারীদের হইল সর্বনাশ। একের পর এক ঐশ্বরিক বাণী আসিতে লাগিল। নিন্দাকারীদের উপর তিরষ্কার বৃষ্টি হইতে লাগিল। অবশেষে তাহাদের জন্য শাস্তি ধার্য্য হইল যে তাহাদের ৮০-৮০ চাবুক লাগানো হউক। পুরুষদের মত নারীদের উপরেও চাবুক চালানো হইল।

সুরা 'আল-নূর' এ রসুল ও তাঁহার ঈশ্বরের দুঃখ ও ক্রোধ এখনও লিখিত আছে। দূর্ভাষীদের মুখ এবেবারে বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল, এখন প্রয়োজন ছিল 'হারেম' এর; কারণ তালি বাজাইতে দুই হস্তই প্রয়োজন। আল্লামিঞা এই আবেদনও মঞ্জুর করিয়া দিলেন এবং সুরা 'আহযাব' অবতীর্ণ হইল-
"হে পয়গম্বরের পত্নীগণ, তোমরা অন্য নারীদের ন্যায় নও। যদি তোমাদের হৃদয়ে ধর্মের ভয় থাকে তবে কথাবার্তায় কোমলতা প্রদর্শন করিও না, যাহাতে দুষ্টাত্মারা প্রলুদ্ধ হয়। সেটুকুই বলো যা প্রয়োজনীয় ও মর্যাদাপূর্ণ।"
"আর তোমরা আপন গৃহে অবস্থান করো, অন্ধকার যুগের স্ত্রীলোকদিগের ন্যায় আপন সৌন্দর্য্যের প্রদর্শন করিয়া বেড়াইওনা।"

Jupiter Joyprakash

আসলে মহম্মদ তাঁহার পত্নীদের উপর জোর জুলুম, বকুনি ইত্যাদির বিরুদ্ধে ছিলেন। আল্লামিঞা সকলের গুরুজন ছিলেন। তাঁহাকেই মধ্যে টানিয়া আনিলেন এবং নিজে যাহা চাহিয়াছিলেন তাহা আল্লাকে দিয়া ঐশ্বরিক বচন হিসাবে বলাইলেন। ইহাতে আয়েষা ও মুহম্মদের আবার মিল হইয়া গেল আর আয়েষার তো গৃহে রাজত্ব চলিতে লাগিল। কিন্তু ইহার পরে আর কোনো যুদ্ধের বেলায় আয়েষাকে সঙ্গে লইয়া যাওয়া হয়নাই।

ইহার পরে আয়েষার দর্শন শেষ দর্শন ছিল। যাহা তাঁহার পতির মৃত্যুশয্যায় হইয়াছিল। মুহম্মদ তাঁহার শেষবারের রোগশয্যায়; যাহা মারণরোগ প্রমাণিত হইয়াছিল, আয়েষার নিকট থাকিবার অনুমতি বিবিদের নিকট আদায় করিয়া লইয়াছিলেন। সেই গৃহেই প্রায়ই ঐশ্বরিক আয়াত অবতীর্ণ হইত। সেই খাটিয়া ছিল, সেই বিছানা-বালিশ। এই গৃহ মুহম্মদের সবচেয়ে প্রিয় ছিল।

রোগ্রস্ত অবস্থায় মুহম্মদ কবরস্থান গেলেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত জানিয়া ঘরে ফিরিলেন। আয়েষাও সেই সময়ে শিরঃপীড়ায় আক্রান্ত হইয়াছিলেন এবং 'মাথা গেল, মাথা গেল' বলিয়া ক্রন্দন করিতেছিলেন।

মুহম্মদ বলিয়া উঠিলেন, "আয়েষা, ইহা তো আমার বলার কথা।" এ শুনিয়াই আয়েষা চুপ হইয়া গেলেন। মুহম্মদের তখন তামাশা করার ইচ্ছা হইল। তিনি কহিলেন, "আয়েষা! তোমার মৃত্যু আমার আগে হইলে কি তোমার ভাল মনে হয় না? থা হইলে আমি তোমাকে নিজহস্তে কবর দিয়া তোমার জন্য প্রার্থনা করিতে পারি।" আয়েষা নাক উঁচু করিয়া উত্তর করিলেন- "এসব অন্য কোথাও শুনাইও। আমি জানি, তুমি আরো সুন্দর পুতুল (বিবি) আনিবার মতলব করিতেছ।"

বেচারা মুহম্মদ আর কি বলিতেন! তর্ক করার শক্তি ছিল না, মুচকি হাসিয়া চুপ থাকিতে হইল।

"হায়াত মোহম্মদী ম্যোরসাহেব কৃত"

Jupiter Joyprakash

পাঠক অনুমান করিতে পারেন যে নবযুবতী বিবিকে পশ্চাতে ছাড়িয়া যাইতে মুহম্মদের কিরূপ টেনশন হইতেছিল। কিন্তু হায়! এই বাস্তব জগত বড়ই কঠোর, নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন। মসজিদের আঙিনায় বিশ বৎসরের পত্নী তাহার ৬২ বৎসরের পতির মস্তক কোলে লইয়া বসিয়া আছেন। মুহম্মদ তাহার চিবাইয়া দেওয়া দাঁতন মুখে লইতে লইতে এই ক্ষণিকের শরীর ত্যাগ করিলেন। এর পর আবুবকর আয়েষাকে বলিয়াছিলেন "মহম্মদের জন্য আমার দুঃখ নাই, কিন্তু মাত্র ২০ বৎসরে বিধবার রূপ যৌবন, আশা ভরসা সকলই শেষ হইল। ইহাতে কোন পিতা অশ্রুপাত না করিয়া থাকিতে পারে!"


Jupiter Joyprakash

সদা সোহাগিনী


আবু বকর যেমন হজ়রৎ মুহম্মদ সাহেবের দক্ষিণ হস্তস্বরূপ ছিলেন তেমনই মোহম্মদ ওমর ছিলেন বাম হাত। আবুবকর এর ন্যায় তিনি সহজে মুসলিম হইতে স্বীকার করেন নাই, কিন্তু যখন হইলেন তখন পূর্ণ বিশ্বাসের সহিতই হইলেন। এই ধর্মের জন্য প্রাণ পর্যন্ত ত্যাগ করিতে প্রস্তুত ছিলেন।

আবু বকর উদার মনের বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলেন। অন্যদিকে ওমর অধিক আবেগপ্রবণ ছিলেন। সহজেই তাঁহার মাথাটি গরম হইয়া যাইত। সেই সময়ে তাঁহাকে সামলানো বড় সহজ ছিল না। তাঁহার কন্যা "হাফসা" পিতার নিকট হইতে এই গুণটি লাভ করিয়াছিলেন। তিনিও কাহারো কথা কানে তুলিতে অভ্যস্ত ছিলেন না। 'খানীস' এর সহিত তাঁহার বিবাহ হইয়াছিল যিনি যুদ্ধে (গিজ়বাবদর) নিহত হইয়াছিলেন। বেশ কিছুদিন বিধবা থাকার পরও কোনো মুসলমান তাঁহাকে বিবাহ করিতে প্রস্তুত হইল না। তখন ওমর প্রথমে আবুবকর এর সহিত তাঁহার বিবাহের প্রস্তাব করিলেন কিন্তু আবুবকর রাজী হইলেন না। ওমর তখন ওসমান কে অনুরোধ করিলেন, কিন্তু তিনিও সম্মত হইলেন না। কারণ হাফসা কে সামলানো কোনো সামান্য ব্যাপার ছিল না। ইহাতে ওমর এর মাথা গরম হইয়া গেল আর তিনি মহম্মদের নিকট হাফসা কে বিবাহ করার প্রস্তাব লইয়া গেলেন। মুহম্মদ মেহেরবানি করিয়া তাহাকে আপন স্ত্রী হিসাবে মঞ্জুর করিয়া লইলেন। এইভাবে আবুবকরের সহিত যেমন আত্মীয়তা ছিল, ওমরের সহিতও সেইরূপ হইল। দুইজনেই পরম বিশ্বস্তভাবে ইসলামের প্রচারে আত্মনিয়োগ করিলেন এবং আপন কন্যাদের সুবাদে মুহম্মদের গুরুজন হইয়া গেলেন। এই রকমই বদর যুদ্ধের আর এক শহীদ উবাইদা-র স্ত্রী ছিল জৈনব। সম্পর্কে উবাইদা
মুহম্মদের ভাই ছিলেন। (আল-মুত্তালিব বংশের সন্তান।) তাঁহার বিধবা পত্নীর সহিতও মুহম্মদ শাদী করিয়া লইলেন। জৈনব বড়ই সুন্দর শরীর-স্বাস্থ্য পাইয়াছিলেন এজন্য তাঁহাকে "আম্মুল্মসাকীন" বলা হইত।

Jupiter Joyprakash

আবু সাল্লামা প্রথম দিকের মুসলমান দের মধ্যে ছিলেন। "হবস" হিজরতের সময়ে তাঁহাকে আরব ছাড়িতে হইয়াছিল। পরে মুহম্মদ যখন মদীনায় ডেরা পাতিলেন তখন তিনিও সেখানে ফিরিয়া আসিলেন। 'ঊহুদ' এর যুদ্ধে তিনি আহত হইয়াছিলেন কিন্তু প্রায় সুস্থও হইয়া উঠিয়াছিলেন। যখন "বনি-সাদ" গোত্রের উপর মুসলিমেরা চড়াও হইল তখন তাঁহাকে সেনাপতি বানানো হইয়াছিল। দুর্বল শরীর লইয়া যুদ্ধ করিতে গিয়া তিনি পরলোক প্রাপ্ত হইলেন। আপন আত্মীয়দের প্রতি মুহম্মদের সহানুভূতি ছিল, তিনি উহার বিধবা 'হিন্দ' এর নিকট যাতায়াত করিতেন। বৃদ্ধা হইলেও হিন্দ সুন্দরী ছিলেন। মুহম্মদ তাহাকে শাদী করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন তখন তিনি বৃদ্ধ হইবার বাহানা দেখাইয়াছিলেন। কিন্তু মুহম্মদ কহিলেন "আমারও কিছু কম বয়স হয়নাই।" ইহার পর হিন্দ তাঁহার বালবাচ্চার কথা তুলিলে মুহম্মদ তাহাদেরও দায়িত্ব লইতে সম্মত হইয়া গেলেন এবং বুড়ীকে রাজী করাইয়া ঘরে আনিলেন। মদীনা মসজিদের সংলগ্ন ৫ কুঠুরী গৃহ সে সময়ে নির্মিত হইয়াই গিয়াছিল। এক এক কামরায় মুহম্মদের এক এক বিবি থাকিতেন। মুহম্মদ পালাক্রমে এক-এক রাত, এক-এক দিন এক এক বিবির সহিত কাটাইতেন। শেষ কামরাখানি ছিল হারিশ এর। যখনই মুহম্মদের ঘরে কোনো নূতন বিবি আসিতেন, তাঁহাকে হারিশ এর কামরায় তোলা হইত। হারিশ এর জন্য নূতন কুঠুরী বানাইয়া দেওয়া পড়িত। সে বেচারী চুপচাপ আলাদা ব্যবস্থা করিয়া লইত। একবার মুহম্মদ স্বয়ং লজ্জিত হইয়া বলিয়াছিলেন "হারিশ কি বলিবে!"।

Jupiter Joyprakash

রাঃ আঃ সৈয়দ আমীর আলি ফরমাইয়াছেন যে এইসব বিধবারা, যাহাদের মুহম্মদের বিবি হইয়া অহঙ্কার হইয়াছিল তাঁহারা অসহায় ছিলেন। তাঁহাদের পতি ইসলামের সেবা করিতে করিতে শহীদ হইয়া গিয়াছিলেন। তাঁহাদের যাহাতে গিন গুজরাণ হইতে পারে তাহার ব্যবস্থা করা মুহম্মদের কর্তব্য ছিল। কার্য্যটি জরুরী ছিল বটে, কিন্তু তাঁহার নিজের দিন গুজরানেই প্রথম হইতে টানাটানি চলিত। তাহার উপর তিনি নিজের রুজিরুটির উপর নূতন বোঝা চাপাইয়া খরচের বহর আরো বাড়াইয়া ফেলিলেন। অন্যদিকে আমদানী সেই আগের মতই রহিল। এক এক দেশের এক এক রেওয়াজ। হয়ত হজরৎ আমীর আলির কথাই সত্য। আরব দেশে মুহম্মদের সময়ে কোনো নারী অন্য পুরুষের নিকট কেবল পত্নী হিসাবেই থাকিতে পারিত। নতুবা হিন্দুস্থানের প্রথা তো এই যে ধর্মাত্মারা পরনারীকে ধর্মভগ্নী বানাইয়া লইতেন। ইহাতে তাহাদেরও দিনাতিপাতের উপায় হইয়া যাইত আবার ধর্মরক্ষাও হইত। হয়ত সমস্ত মুসলমানের মধ্যে বিধবাদের পালনকর্তা আর কেহই ছিল না। হয়ত কোনো কুমার অথবা বিপত্নীক ঐসব বিধবাদিগকে বিবাহ করিতে প্রস্তুত ছিল না। দয়ার সাগর একমাত্র মুহম্মদই ছিলেন। আমাদের তুচ্ছ বুদ্ধিতে তো মুহম্মদ তাহাদিগকে ধর্মভগ্নী মানিয়া লইলেও কাজ চলিত। অথবা যদি বিবাহই দিতে হয় তবে কোনো কুমারের সহিত দেওয়া যাইত। আপন আপন ধর্মের ব্যাপার, হয়ত মুহম্মদের এই পথই ভাল বোধ হইয়াছিল যে বিবিতে গৃহ পরিপূর্ণ কইয়া লইবেন। ৬০ বৎসরের বৃদ্ধ আর ৫-৫ জন বিবি! যাহা হউক, বিবি লইয়া কামকাজ নিশ্চয় ভালই চলিত। দিন-রাত মৌজেই কাটিত। বৃদ্ধের তরুণী ভার্যা চিরকালীন ঘটনা।

Jupiter Joyprakash

পুত্রবধু সমাচার

আমরা আগেই বলিয়াছি যে জ়ায়েদ নামে খাদীজার এক ঈশাঈ গোলাম ছিল। সে মুহম্মদের ধর্মীয় ও মানসিক সমস্যায় নানাভাবে সমাধান করিত। এজন্য উহার প্রতি মুহম্মদের বিশেষ প্রীতি ছিল। খাদীজা এই গোলামটি মুহম্মদকে দান করিয়াছিলেন এবং মুহম্মদ তাহাকে নিজের পুত্র বানাইয়া লইয়াছিলেন। জ়ায়েদ ও মুহম্মদকে অত্যধিক ভালবাসিত। একবার তাহার আপন পিতা তাহাকে লইতে আসিলে সে যাইতে সটান অস্বীকার করিয়াছিল। মুহম্মদ রসুলও ছিলেন আবার বাপও ছিলেন, সে শুধুই বাপের নিকট থাকিয়া কি করিত! উহার প্রথম বিবাহ "উম্মেমন" এর সহিত হইয়াছিল, যাহার বয়স ছিল জ়ায়েদ এর দ্বিগুণ। কিন্তু বাপ মুহম্মদ পাত্রীটি পছন্দ করিয়াছিলেন ফলে বাধ্য হইয়া তাহাকে বিবাহ করিতে হইয়াছিল। তাহাদের একটি পুত্র জন্মাইয়াছিল। তাহার নাম ছিল "ওসামা"। জ়ায়েদ এর দ্বিতীয় বিবাহ হয় জয়নব এর সহিত। জয়নব কুরেশী বংশের ছিল এবং মুহম্মদের পিস্তুতো সম্পর্কের ভগ্নী ছিল। একদিন মুহম্মদ জ়ায়েদ এর অবর্তমানে তাহার ঘরে গিয়া পড়িলেন। জয়নব পর্দার আড়াল হইতে রসুলের (আবার শ্বসুরও বটে) গলা পাইয়া তাড়াতাড়ি আসিয়া তাঁহাকে ভিতরে ডাকিল। মুহম্মদের নজর তাহার সুন্দর চেহারায় পড়িল। আর কি বাকি থাকে? তাঁহার দিলের মধ্যে কারেন্ট লাগিয়া গেল আর মুখে বাহির হইল- "সোভান-আল্লা! তোমার সৃষ্টি কতই না সুন্দর!"
জয়নব তাহা শুনিয়া ফেলিল এবং মনে মনে পয়গম্বরের হৃদয় জয় করিয়া খুশী হইয়া উঠিল। জায়েদকে সম্ভবতঃ তাহার পছন্দ ছিল না। যতই মুহম্মদের পুত্রতুল্য হোক না কেন, আসলে তো ছিল সে গোলামই!

Jupiter Joyprakash

জায়েদ যখন গৃহে ফিরিয়া আসিল, জয়নাব তাহাকে ঘটনা জানাইয়া দিল। ইহার পর যাহা হইল তাহাকে আপনারা মুহম্মদের বিবাহের কথাবার্তা বুঝিবেন কিনা তাহা আপনাদের ব্যাপার। কিম্বা হয়ত জায়েদ জয়নবের উপর পূর্বেই চটিয়া ছিল। যাহাই হউক সে এক দৌড়ে মুহম্মদের নিকট গিয়া হাজির হইল আর নিজের বিবিটিকে যাহাকে দেখিয়া মুহম্মদ মুগ্ধ হইয়াছিলেন তাহাকে তালাক দিবার প্রস্তাব করিল। কিন্তু মুহম্মদ তাহাকে বুঝাইয়া কহিলেন, "সুখে শান্তিতে সংসার করো"। কিন্তু যে বিবি অন্যের দিকে টান দেখাইতেছে তাহাকে লইয়া সংসার করার ইচ্ছা জায়েদ এর ছিল না। সে জয়নবকে তালাক দিয়াই ফেলিল। আর জয়নব তখন মুহম্মদের খিদমতের আশায় তাঁহার পিছনে লাগিয়া গেল। বদনামের ভয়ে মুহম্মদ ইহাতে সম্মত হইতে পারিতেছিলেন না। সেই সময়েই ঐশ্বরিক বাণী আসিয়া সমস্ত সমস্যার সমাধান করিয়া দিল।

আল্লা মনুষ্যকে দুইটি হৃদয় দেন নাই তেমনই পোষ্যপুত্রকে তোমার পুত্রও করেন নাই। যাহা তুমি বলিয়াছ তাহা তোমার মুখের কথা মাত্র, কিন্তু আল্লাহ প্রকৃত সত্য জানেন ও সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। তিনি ইচ্ছা করেন যে মনুষ্য তাহার প্রকৃত পিতার নামেই পরিচিত হঊক। আর যখন তুমি বলিয়াছ "বিবি লইয়া সুখে সংসার করো" তখন তুমি সত্য গোপন করিয়াছ যে সত্য প্রকাশ করাই আল্লার ইচ্ছা ছিল। ভয় করিয়ো না, জায়েদ যখন তালাক দিয়াছে তখনই আমরা মুহম্মদের সহিত বিবাহ দিয়াছি, যাহাতে মোমিনেরা তাহাদের পোষ্যপুত্রের বিবিকে বিবাহ করিতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী তালাক সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে এবং আল্লার ইচ্ছা অবশ্যই পূর্ণ হইবে।

-- সুরা আখরাব ৫ --

মুহম্মদ তোমাদের কাহারও পিতা নহেন তিনি আল্লার রসুল এবং "খাতিমুল্মরসলীম"। আর আল্লা সবকিছু অবগত।

Jupiter Joyprakash

এসব কথা এইজন্য লিখিত হইল যাহাতে মুহম্মদের অন্তরমন সম্পর্কে পাঠক জ্ঞানলাভ করিতে পারেন। জয়নবকে বিবাহ করিতে মুহম্মদ মুখে অস্বীকার করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু অন্তরে প্রেমের আগুন জ্বলিয়া উঠিয়াছিল। এমনও বলিতে পারেন যে অগ্নি সর্বদাই জ্বলিয়া থাকিত। তাহাই ঈশ্বরের বাণীরূপে প্রকাশিত হইয়া গেল। আর তারপর মুহম্মদ জয়নবের নিকট বার্তা পাঠাইলেন-
"আল্লাহ তোমাকে আমার সহিত মিলাইয়া দিয়াছেন। তাই আর বিবাহের কোনো প্রয়োজন নাই।"

আল্লা যেখানে মনের মিলন করিয়া দিয়াছেন সেখানে মৌলভী-কাজী দের নাক গলাইয়া বিবাহ দেওয়া নিরর্থক। তাই আরো বলা হইল-
"আল্লাহ স্বয়ং বিবাহ দিয়াছেন এবং জিব্রাইল তাহার সাক্ষী" [তাফসীর হুসনী আয়াত মজকর খূরা জমকুর], "আর বিবাহের জন্য এই দুটি ছাড়া অন্য কি প্রয়োজন?"

রঙ্গীলা রসুল এর এই কাহিনী বড়ই বিচিত্র। পুত্র পুত্র রহিল না, পুত্রবধু পুত্রবধু রহিল না।

পাঠক এইবার বুঝিতে পারিবেন কেন মুহম্মদ কাহারো সহিত মাতা, কন্যা অথবা ভগ্নী পাতাইতে ইচ্ছুক ছিলেন না। যেখানে পাতানো পুত্রেরই সহিত সম্পর্ক রহিল না, যেখানে তাহার বিবিও মুহম্মদের জন্য হালাল হইয়া গেল, সেখানে পাতানো মাতা-কন্যা-ভগ্নীরা কিভাবে নিস্তার পাইত?

Jupiter Joyprakash

সেই সময়ের মুসলমানেরা কিন্তু চুপ ছিল না। ইতিহাস বলে মুহম্মদ কাজটি ভাল করেন নাই। তাঁহার আসমানী আয়াত, আল্লা, জিব্রাইল সকলের উপরেই লোকে বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। এমন নহে যে মুহম্মদ নিজের দোষ বুঝিতেন না। বরং তিনি ভালই জানিতেন যে সেদিন যদি তিনি জায়েদের গৃহে না যাইতেন এবং বেপর্দা জয়নবকে না দেখিতেন তবে এইভাবে দিন দুপুরে অন্ধকার নামিত না। যাহা হউক সে সব তো ঘটিয়াই গিয়াছিল, তাহার পর কি হইল দেখা যাক!

মুহম্মদ এইবার নিজের হারেম খানি লইয়া চিন্তায় পড়িলেন। লোকে সর্বদাই তাঁহার গৃহে আসিত। তাঁহার বিবিদের সহিত কথাবার্তা কহিত। পয়গম্বরের যাহা হইয়াছিল তাহা অন্য কোনো মুসলমানের উপরেও ঘটিয়া যাওয়া অসম্ভব ছিল না। জায়েদের বিবি জয়নব যাহা করিতে পারে  মুহম্মদের কোনো বিবিও সাহস করিয়া তেমন কিছু করিয়া ফেলিতে পারিত। ইহার ব্যবস্থা সময়মত করার প্রয়োজন ছিল। এইসব চিন্তা করিয়া মুহম্মদ শুন্যপানে তাকাইলেন এবং আল্লার দরবারের ঘন্টী বাজাইয়া দিলেন। অমনি কাজ হইয়া গেল, আয়াত নামিয়া আসিল।

হে মুমিনগণ!! রসুলের গৃহে প্রবেশ করিও না। তোমাদের যাহা জানিবার থাকে তাহা পর্দার আড়াল হইতে প্রশ্ন করিও। ইহাই তোমাদের ও তাঁহার হৃদয়ের জন্য সর্বোত্তম। আর তোমাদের জন্য কখনোই উচিত নয় যে তোমরা রসুলের মনে দুঃখ দাও বা তাঁহার মৃত্যুর পর তাঁহার বিবিদের সহিত বিবাহ করো। রসুলের বিবিরা তোমাদের মাতা।



হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।
 
O you who believe! Enter not the Prophet's houses, except when leave is given to you for a meal, (and then) not (so early as) to wait for its preparation. But when you are invited, enter, and when you have taken your meal, disperse, without sitting for a talk. Verily, such (behaviour) annoys the Prophet, and he is shy of (asking) you (to go), but Allâh is not shy of (telling you) the truth. And when you ask (his wives) for anything you want, ask them from behind a screen, that is purer for your hearts and for their hearts. And it is not (right) for you that you should annoy Allâh's Messenger, nor that you should ever marry his wives after him (his death). Verily! With Allâh that shall be an enormity.

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَى طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنكُمْ وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاء حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَن تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمًا
তোমরা খোলাখুলি কিছু বল অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
 
Whether you reveal anything or conceal it, verily, Allâh is Ever All­Knower of everything.

إِن تُبْدُوا شَيْئًا أَوْ تُخْفُوهُ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
নবী-পত্নীগণের জন্যে তাঁদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নি পুত্র, সহধর্মিনী নারী এবং অধিকার ভুক্ত দাসদাসীগণের সামনে যাওয়ার ব্যাপারে গোনাহ নেই। নবী-পত্নীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয় প্রত্যক্ষ করেন।
 
It is no sin on them (the Prophet's wives, if they appear unveiled) before their fathers, or their sons, or their brothers, or their brother's sons, or the sons of their sisters, or their own (believing) women, or their (female) slaves, and keep your duty to Allâh. Verily, Allâh is Ever All­Witness over everything.

  لَّا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِي آبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاء إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاء أَخَوَاتِهِنَّ وَلَا نِسَائِهِنَّ وَلَا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ وَاتَّقِينَ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا

Jupiter Joyprakash


এই দিব্যবচনের শেষ কথাটি আমার বড়ই পছন্দের। আমি নিজেও তাঁহাদের মাতা বলিয়াই মনে করি। ইহার পর আরও বলা হইল-
"হে রসুল! আপন স্ত্রী কন্যা তথা মোমিন দিগের স্ত্রীদের বলুন যে তাহারা যেন বস্ত্রের একাংশ আপ্ন দেহে জড়াইয়া রাখে, আপন দৃষ্টি সংযত করে এবং নিজ মর্যাদা রক্ষা করে। -------------

যদি এইসব নিয়ম জয়নবের গৃহে যাইবার পূর্বে প্রচলিত হইয়া যাইত তবে জয়নবের সংসার বাঁচিয়া যাইত, মুহম্মদ নিজে কলঙ্ক হইতে বাঁচিতেন। কিন্তু  পর্দা করিয়াই কি মোমিনরা তাঁহার কীর্তি হইতে নিস্তার পাইয়াছিল? মনের মধ্যে সাধুতা আনয়ন করাই অসৎ কর্মের প্রকৃত ঔষধ। মুহম্মদ যদি এই বিষয়ে যত্ন লইতেন তবে হয়ত নিজের ধর্ম ও ধর্মের অনুসারীদের প্রকৃত মঙ্গল হইত। ম্যোরসাহেব এক কাহিনী আছে, যিনি হজ্ব করিতে মক্কায় গিয়া আরবের অবস্থা স্বচক্ষে এইরূপ দেখিয়া আসিয়াছিলেন-

মহিলারা ১০-১২ খানি করিয়া বিবাহ করিত। দুই চারিটি মাত্র বিবাহ করিয়াছে এমন আওরাৎ এর সংখ্যা বেশ অল্পই ছিল। পতি বৃদ্ধ হইয়া গেলে অথবা অন্য কেহ পছন্দ হইয়া গেলেই তাহারা মক্কাশরীফে আসিয়া মামলা-খতম করিয়া লইত। পুরাতন পতিকে ত্যাগ করিয়া নূতন বিবাহ করিয়া ফেলিত। এমনই ছিল পরদার মহিমা।

Jupiter Joyprakash

হারেমের শোভাঃ
এতক্ষন আমরা রঙ্গিলা রসুল এর দস্তুরমত গৃহস্থজীবনের আলোচনা করিতেছিলাম, সেজন্য অন্যদের ইহার মধ্যে আসিতে দেওয়া হয়নাই। কিন্তু এইবার তাহার ব্যতিক্রম করিতে হইবে। কারণ মুহম্মদ আর যাহাদের আনিয়াছিলেন তাহারা কেবল ইহুদিনী ছিল। মুহম্মদের জিদ ধরার পরেও তাহারা ব্যাভিচারে সম্মত ছিল না। ব্যাপারখানি পাঠকের পক্ষে বুঝা কঠিন হইবে যদি না মুহম্মদের সহিত ইহুদীদের সম্পর্ক বিষয়ে কিছু বিবরণ না দেওয়া হয়। দেখা যাক!

হিজরত (দেশত্যাগ) এর পর মুহম্মদকে ইহুদীদের ধর্মের বহুরকম প্রশংসা করিয়া তাহাদের নিকট নিজ মতবাদের সার্টিফিকেট লইতে হইয়াছিল। পরে যখন তাঁহার অনুসারীদের সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাইল তখন সেই ইহুদীরাই মুহম্মদের গলার কাঁটা বোধ হইতে লাগিল। অবশেষে একদিন তিনি উহাদের ঘেরাও করিয়া ফেলিতে সক্ষম হইলেন। ইহুদীরা যখন ক্ষমাপ্রার্থনা করিল তখন তিনি উহাদের কোতল করার সিদ্ধান্ত করিলেন। শত শত ইহুদী তলোয়ারে দুইখানা হইয়া গেল। একজন ইহুদিনীকেও তাঁহার আদেশে কাটিয়া ফেলা হইয়াছিল।

'রেহানা' নামের এক আওরাৎ এর প্রতি অবশ্য মেহেরবানি করা হইয়াছিল।  প্রথমেই তাহাকে আলাদা করিয়া রাখা হইয়াছিল। দেখিতে শুনিতে সুন্দর ছিল বলিয়া সে মুহম্মদের জন্য রিজার্ভ ছিল। মুহম্মদ যখন তাহাকে বিবাহের আবেদন জানাইলেন তাহা সে নামঞ্জুর করিয়া দিল। ইসলাম কবুল করার প্রস্তাবেও সে সম্মত হইল না। শেষে মুহম্মদ তাহাকে রক্ষিতা বানাইয়া রাখিলেন। অবশ্য সে বেচারী বেশিদিন জীবিত রহিল না। ভাই বেরাদরদের মৃত্যু এবং রসুলের মেহেরবানির চাপে কাঁদিয়া কাঁদিয়া মরিয়া গেল।

Jupiter Joyprakash

বনি মুস্তলক গোত্রের উপর আক্রমণের কথা আমরা আগে বলিয়াছি। যেখানে আয়েষা হারাইয়া গিয়াছিলেন এবং নানা বদনাম রটিয়াছিল। এই যুদ্ধে অন্য মালামালের সহিত জ়োয়েরিয়া নামের ইহুদিনীও আসিয়াছিল যাহার নিলামের সময়ে মুহম্মদ ডাকাডাকিতে দাম বাড়ানোর সুযোগ না দিয়া প্রথমেই তাহাকে কিনিয়া লইলেন (eBay তে Buy It Now এর মতো) এবং বিবি বানাইয়া ফেলিলেন। জ়োয়েরিয়া যখন মুহম্মদের গৃহে আসিল তখন তাহার সৌন্দর্য্য দেখিয়াই আয়েষা বুঝিয়াছিলেন এ আর বিদায় হইবে না, আর এক সপত্নী বাড়িয়া যাইবে। আর হইলও তাহাই।
খাইবার এও ইহুদীদের এক বসতি ছিল। সেখানেও মুহম্মদ চড়াও হইয়া দখল করিলেন। তাহাতে উহাদের সর্দার 'কনাণ' এর মৃত্যু হইল আর তাহার বিবি দখলে আসিল। মুহম্মদ তাহাকে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করিতে সে সম্মত হইয়া গেল। আবার মদীনায় ফিরিবার কোনো কথাই হইল না। সেখানেই মাটি ফেলিয়া দস্তরখান বানানো হইল ও খেজুর মাখন এর নিমন্ত্রণ হইয়া গেল। নূতন বিবিলে সাজাইয়া মুহম্মদ যখন কামরায় লইয়া গেলেন তখন চারিপাশে বিশ্বাসী অনুচরেরা প্রহরায় ছিল। আশঙ্কা ছিল এই বেজাতের আওরাৎ বদলা লইবার জন্য কিছু করিয়া ফেলিতে পারে। অবশ্য তেমন কিছু হয়নাই। এই বিবির কপালে এক ক্ষতচিহ্ণ ছিল। যখন মুহম্মদ তাহার কারণ জানিতে চাহিলেন তখন সে উত্তর দিল  যে আমি একরাত্রে স্বপ্নে দেখিয়াছিলাম আকাশ হইতে চাঁদ আমার কোলে পড়িতেছে। আমার পতিকে ইহা জানাইতে তাহার মনে সন্দেহ হইল। "হারামজাদী! পয়গম্বরেকে বিবাহ করার শখ হইয়াছে?" এই বলিয়া সে আমার মাথায় আঘাত করিল। সেই হইতেই এই দাগ হইয়াছে। পাঠক আশা করি সকলই বুঝিয়াছেন। যাহার অন্তরে পূর্ব হইতেই মুহম্মদের বাস, তাহার চরিত্র লইয়া আর কথা কি থাকিতে পারে! ইহার পর মুহম্মদ খাইবার হইতে মদীনায় ফিরিলেন। সেখানে আবার আবুসফিয়ার কন্যা ওস্মহবিবি কে বিবাহ করিলেন।