Abuler Shoshyokhetro (আবুলের শষ্যক্ষেত্র)

Started by Jupiter Joyprakash, November 27, 2013, 04:15:19 PM

Previous topic - Next topic

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Jupiter Joyprakash

ডাঃ আবুল দিওয়ানা কবে কোথায় জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন সে কথা কেহই মনে রাখে নাই। সেদিন যদি লোকে বুঝিতে পারিত যে তিনি একদিন জগতে বিখ্যাত হইবেন তবে নিশ্চয় তাহা ইতিহাসে কোথাও লিখিয়া রাখা হইত। তবে ডঃ আবুল যে শষ্যক্ষেত্রে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন সেটির বিস্তারিত বিবরণ দলীলে লিখিত আছে। কিভাবে পরমপ্রভূর সৃষ্ট একটি দ্বিপদ জীব মানব রচিত একটি সনদে সম্মতি প্রদান করিয়া সহসা শষ্যক্ষেত্রে পরিণত হইল সে কথা গ্রামের বয়স্ক মানুষ মাত্রেই জানেন।

সবচেয়ে আশ্চর্য্য ব্যাপার হইল এই দ্বিপদ শষ্যক্ষেত্রটিও আবার আরেকটি দ্বিপদ শষ্যক্ষেত্রে উৎপন্ন হইয়াছিল। শষ্যক্ষেত্রে কিভাবে শষ্য জন্মায় তাহা মানব জাতির জ্ঞানের সীমানায় অবস্থিত হইলেও এক শষ্যক্ষেত্রে আরেক শষ্যক্ষেত্র ফলাইবার জ্ঞান এখনও একমাত্র স্বপ্নযোগে আকাশ হইতেই আসিয়া থাকে। বিজ্ঞান এখনো সেই পরিমাণে উন্নত হইতে পারেনাই।

ডঃ আবুল যে শষ্যক্ষেত্রে জন্মাইয়াছিলেন সেটি যখন আরেকটি শষ্যক্ষেত্রে উৎপন্ন হইয়াছিল তখন তাহা শষ্যক্ষেত্র ছিল না। কিন্তু নেহাত মরিয়া না গেলে শুঁয়োপোকার যেমন গুটি হওয়া অবধারিত, তেমনই উহাও একদিন শষক্ষেত্রে পরিণত হইবেক তাহা সকলেই জানিত। সেজন্য উন্নত রেশমের জন্য আমরা যেমন শুঁয়োপোকাকে যধাসাধ্য যত্নে সুন্দর গুটিতে পরিণত হইতে সহায়তা করি, তেমনই উহাকেও সর্বপ্রকার যত্নসহকারে একটি সুন্দর ও উর্বর শষ্যক্ষেত্রে পরিণত করার জন্য সকলেই যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করিয়াছিলেন। তাঁহাদের সমবেত প্রচেষ্টার ফলেই যে ডঃ আবুল এর ন্যায় অমৃতফলের সৃষ্টি সম্ভব হইয়াছে সে কথা তাঁহারা জোর গলায় বলিতেও ছাড়েন না।

উক্ত শষ্যক্ষেত্রটি যখন শিশু ছিল তখন বিভিন্ন শষ্যক্ষেত্রে খেলা করিয়া বেড়াইত। অবশ্যই যে শষ্যক্ষত্র কর্ষণের যোগ্য নহে তাহার প্রতি মালিকের তেমন নজর থাকে না। কিন্তু যখনই সেটি চাষযোগ্য হইয়া পড়ে তখনই তাহার মূল্য। অবশ্য আজকাল চহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্ঞানীরা ছয়মাসের শষ্যক্ষত্রেও চাসবাস করা হালাল করিয়াছেন, কিন্তু সেকালে এত বেশি জ্ঞানীর অভাব ছিল। তবে শষ্যক্ষেত্রের চাহিদা এত বেশি না থাকিলেও রেশম অতি মূল্যবান ছিল। তাই শুঁয়োপোকা ও গুটির রক্ষার জন্য সকলেরই চিন্তা ছিল।

যাহা হউক, শষ্যক্ষেত্রটি ধীরে ধীরে ব্যবহারযোগ্য হইয়া উঠিতে আরম্ভ করা মাত্রই বিভিন্ন প্রজাতির জীবের নজর পড়া শুরু হইল। আকাশ হইতে পতিত জ্ঞানভান্ডারে বলা হইয়াছে যে ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিখানি মক্ষিকা, গরুছাগল চোর ইত্যাদির সমবায়ে গঠিত। তাই যেভাবে খাদ্যে মক্ষিকা বসিলে মক্ষিকাকে বেগন দিয়া মারা অনুচিত, যেভাবে বাগানে গরুছাগল ঢোকা স্বাভাবিক, যেমন ধনী ব্যক্তির গৃহে চোর প্রবেশের অধিকার থাকে তেমনই এইসব নিয়ম দ্বিপদ শষ্যক্ষত্রের জন্যও প্রযোজ্য। তাই গরুছাগলের দোষ না দিয়া শষ্যক্ষেত্র রক্ষার জন্য তাহার চারিদিকে চীনের মহাপ্রাচীর নির্মাণ করা কর্তব্য। এ বিষয়ে প্রাচীন কাহিনী আছে-

একবার চোরেরা যখন মহামানবের ঊট চুরি করিয়াছিল তখন মহামানব এই নীতি অনুসারে সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে সুন্দর ঊট দেখিয়া চোরেদের লোভ হইবার ইচ্ছা স্বাভাবিক। খোলা খাদ্যে তো মক্ষিকা আসিয়া বসিবেই, বৃক্ষে পক্ব ফল ঝুলিতে দেখিলে কে না খাইতে চায়! অতএব মহামানব সেই সকল সুন্দর ঊটেদের চক্ষুতে শলাকা প্রবেশ করিয়া অন্ধ করিয়া দিতে আদেশ করিলেন এবং সেগুলিকে মরুভূমিতে ছাড়িয়া দিলেন। ফলে আর তাহারা মনুষ্যের মনে লোভ জাগাইতে পারিল না।

এইরূপে একদিকে দ্বিপদ শষ্যক্ষেত্রটি উপযুক্ত হইতছিল, সেই সময়ে 'আবুলের বাপ' সেটিকে পছন্দ করিয়া ফেলিলেন। অবশ্য তিনি এইটিকে শষ্যক্ষেত্র হিসাবে পছন্দ করেন নাই। আবুলের বাপ একজন সদবংশীয় তরুণ ছিলেন। ধর্মেকর্মে ও পরোপকারে তাঁহার অতিশয় মতি ছিল। আকাশ হইতে অবতীর্ণ বচনসমূহকে তিনি অতিশয় মান্য করিতেন। তথাপি কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তিনি দ্বিপদ শষ্যক্ষেত্রগুলিকে শষ্যক্ষেত্র বলিয়াই গণ্য করিতেন না। যদি তিনি এরিস্টটল, ল্যামার্ক, ডারুইন, ম্যান্ডেল, ক্রীক, খুরানা ইত্যাদিদের পুস্তক পাঠ করিয়া থাকিতেন তবে হয়ত তাঁহার এই মানসিকতার কারণ বুঝা যাইত কিন্তু তিনি এইসব কুখ্যাতদের নামও জানিতেন না। তবুও তিনি এইসব দ্বিপদ শষ্যক্ষেত্রগুলিকে মনুষ্যপ্রজাতীর অন্তর্গত বলিয়া বিশ্বাস করিতেন। যদিও রেশমকীট যেমন গুটিবেষ্টিত হইবার পর সম্পুর্ণ নূতন হইয়া উড়ন্ত পতঙ্গে পরিণত হয় তেমনই তাঁহার চারিদিকে প্রত্যহই এই দ্বিপদ প্রজাতিটি চীনের প্রাচীরে বেষ্টিত হইয়া শষ্যক্ষেত্রে পরিণত হইত তথাপি এইসকল প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ দেখার পরেও তাঁহার অদ্ভূত ধারণার কোনো পরিবর্তন হয়নাই। এজন্য সকলেই তাঁহাকে ছিটগ্রস্ত বলিয়া মনে করিত।

Jupiter Joyprakash

ছিটগ্রস্ত হওয়াতে বিশেষ সমস্যা হয়নাই। পরিবারের সকলের নিকট তিনি বড়ই প্রিয় ছিলেন। এমন কি তিনি যখন নিজের জন্য শষ্যক্ষেত্র পছন্দ করিলেন তখনও তাঁহার পরিবারের সকলেই অতিশয় দুঃখ পাইলেও সম্মতি প্রদাণ করিয়াছিলেন। দুঃখ পাইবার প্রধান কারণ অবশ্য অন্যস্থানে নিহিত ছিল; দেশে বিদেশে আরও অনেক উন্নত মানের শষ্যক্ষেত্র পাওয়া গিয়াছিল। যেগুলির সহিত উপজাত (অথবা গিফট ভাউচার) হিসাবে ভালমতন  প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তাহার পরেও আবুলের বাপের সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁহার পরিবারের আস্থা কম হয়নাই।

সমস্যা হইল অন্যদিকে। আবুলের বাপ যে শষ্যক্ষেত্রটিকে পছন্দ করিয়াছিলেন তাহার রক্ষকবৃন্দ রীতিমত বিচলিত হইয়া পড়িলেন। যে অকালপক্ব তরুণ আদৌ শষ্যক্ষেত্রকে শষ্যক্ষেত্র বলিয়াই স্বীকার করে না তাহার হস্তে এতদিনের সযত্নলালিত শষ্যক্ষেত্রটিকে প্রদান করিতে তাঁহাদের ভীষণ আপত্তি ছিল। অবশ্য তাঁহারাই যে কেবল বিচলিত হইয়াছিলেন এমন নহে। শষ্যক্ষেত্রটির চতুর্দিকে যে চীনের প্রাচীরের ন্যায় মহান ও অত্যাশ্চর্য্য নির্মাণ স্থাপনা করা হইয়াছিল তাহা যদি বিনাশ প্রাপ্ত হয়; এই আশঙ্কায় গ্রামের সকলেই বিচলিত হইয়া পড়িয়াছিল।