কোরবানি কাহিনী

Started by Jupiter Joyprakash, October 03, 2015, 09:16:25 AM

Previous topic - Next topic

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Jupiter Joyprakash

প্রাতঃকালে ঈশ্বর তাঁহার আরাম চেয়ারে হেলান দিয়া দার্জিলিং চা পান করিতেছিলেন। স্বর্গোদ্যানের দিকে চাহিয়া চাহিয়া তাঁহার মনে পুরাতন দিনের স্মৃতি ভাসিতেছিল। ঐ আপেলবৃক্ষটির নিচে বসিয়া আদম ও ঈভ কতই না ঝগড়া করিয়াছে। তখন তাহাদের বাক্যযন্ত্রণায় তিনি বিরক্ত হইতেন। এখন মনে হইল উহাদের একেবারে বিদায় না করিয়া দিলেই ভাল হইত।
সহসা গিবরিল আকাশ হইতে সরাসরি ঈশ্বরের চেয়ারের পদতলে পতিত হইয়া সম্মুখের দুইটি পদ জড়াইয়া ধরিল। চিৎকার করিয়া বলিল; খোদাবন্দ! গজব হইয়া গিয়াছে!
ঈশ্বর পকেটে হাত দিয়া হাসিয়া কহিলেন- হইতেই পারে না। গজবের গুদামে আমি তালা মারিয়া রাখিয়াছি। চাবীটি আমার নিকটেই আছে।
গিবরিল কহিল, এ গজব সে গজব নহে প্রভু। আমি ইব্রাহিমের কুটির হইতে আসিতেছি।
ঈশ্বর আবার হাসিয়া কহিলেন, তুমি তো সেখানেই গিয়াছিলে। ইব্রাহিমের জন্য যে স্বপ্নাদেশ পাঠাইয়াছিলাম তাহা ডেলিভারি হইয়াছে তো?
ডেলিভারি হইয়াছে প্রভু! তবে সামান্য সমস্যা হইয়া গিয়াছে।
সামান্য সমস্যায় তুমি এত বিচলিত হইতেছ কেন? ইব্রাহিম তাহার পুত্রকে কোরবানি করতেছে- এই স্বপ্ন তাহার মগজে ঢুকাইয়া দিতে কোনো সমস্যা হইয়াছে? সমস্যা যাহাতে না হয় সেজন্য তোমাকে তো দুইটি প্রজেক্টর দেওয়া হইয়াছিল।
যন্ত্রে কোনও সমস্যা হয়নাই প্রভু।
তবে কিসের সমস্যা? বিস্তারিত বয়ান করিয়া শোনাও।

গিবরিল মাথা চুলকাইয়া কহিল- "প্রভু! আমি যখন দুইটি প্রজেক্টর লইয়া ইব্রাহিমের কুটিরের মধ্যে প্রবেশ করিলাম তখন মধ্যরাত। ইব্রাহিম ও তাহার পত্নী ঘুমাইতেছিল। আমি যন্ত্রটি তাক করিয়া ইব্রাহিমের মস্তকে স্বপ্নটি চালাইতে সবে শুরু করিয়াছি এমন সময়ে তাহার পত্নী জড়াজড়ি শুরু করিয়া দিল। গোলেমালে স্বপ্নটি দুইজনের মস্তকেই ঢুকিয়া গিয়াছে খোদাবন্দ!"

ঈশ্বর একটু মাথা চুলকাইয়া কহিলেন, "তারপর?"
"তারপর প্রভু, আমি স্বপ্নের ফলাফল দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। প্রাতঃকালে ইব্রাহিম বড়ই চিন্তিতভাবে ভেড়ার পাল লইয়া মাঠে চলিয়া গেল। সে বিদায় হইবামাত্র তাহার পত্নী তলোয়ারে শান দিতে বসিয়াছে।"
ঈশ্বর বড়ই আনন্দিত হইয়া শুধাইলেন- "পুত্রকে কোরবানি করার উদ্যোগ করিতেছে বুঝি? ইব্রাহিম কোনও কর্মের নহে।"
গিবরিল অশ্রুপাত করিতে করিতে কহিল- "না খোদাবন্দ! পুত্রকে কোরবানি দিবার কোনো সদিচ্ছা তাহার নাই। বরং অন্যকেহ যদি তেমন প্রচেষ্টা করে তবে তাহার মুন্ডটি নামাইয়া দিবার উদ্দেশ্যে সে তলোয়ার শানাইতেছে।"
ঈশ্বর মস্তকে হস্ত রাখিয়া বসিয়া রহিলেন। দার্জিলিং চা ঠান্ডা হইতে লাগিল। কিন্তু কোনও উপায় বাহির হইল না। অবশেষে শুধাইলেন- "উহার মগজে কোরবানির মহিমা সম্পর্কিত কিছু স্বপ্ন প্রজেক্ট করিয়া দেখিয়াছ?
"আপনি দিলে তাহাও করিয়া দিব খোদাবন্দ! কিন্তু তাহার অন্তরে মোহর মারা আছে। আপনার সৃষ্টি আপনি ভালই জানেন।"
ঈশ্বর চিন্তা করিতে লাগিলেন। উহারা বরাবরই এইরকম। ঈভকে বানানোর সময়েই তিনি নিশ্চয় কিছু গোলমাল করিয়াছিলেন। তাহার উপর স্বর্গ হইতে তাড়াইয়া দিয়া আরেক ভুল করিয়াছেন। একেবারেই হাতের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে উহারা। হাতের কাছে থাকিলে হয়ত সংশোধনের পথ পাওয়া যাইত। চিন্তা করিতে করিতে ঈশ্বর ঘুমাইয়া পড়িলেন। গতিক দেখিয়া গিবরিল উড়িয়া পালাইল।

সন্ধ্যাবেলা ঈশ্বর গিবরিলকে ডাক দিয়া আনাইলেন। গিবরিল আসিবামাত্র তাহাকে যন্ত্রপাতি ধরাইয়া দিয়া কহিলেন- "এখনই যাও! ইব্রাহিম ঘুমাইবামাত্র তাহার মগজে নূতন স্বপ্ন দিয়া আসিতে হইবে। পুত্র কোরবানি ক্যানসেল হইয়া গিয়াছে। তাহার পরিবর্তে একটা দুম্বা দিতে বলিও।"